ফাইল চিত্র।
অভিযুক্তের খোঁজ পেতে পুলিশকে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে, এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এ বার অভিযোগকারীদের খোঁজেই উর্দিধারীদের কালঘাম ছুটে যাচ্ছে বলে খবর! পুলিশ অফিসারদের অনেকেই বলছেন, এ ক্ষেত্রে শুধু তো অভিযোগকারীকে খুঁজে বার করলেই হবে না। তাঁকে বিচারকের সামনে হাজির করিয়ে গোপন জবানবন্দিরও ব্যবস্থা করতে হবে। সেই কাজেই আপাতত দিন-রাত এক করে ফেলতে হচ্ছে এ রাজ্যের আইনরক্ষকদের।
রাজ্যে ভোট-পরবর্তী অশান্তির মামলায় কড়া অবস্থান নিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। তাদের নির্দেশে অশান্তি-হিংসার নানান অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদল রিপোর্টও জমা দিয়েছে। আদালতের নির্দেশ, অভিযোগ নিয়ে মামলা রুজু করলেই হবে না, সেই সঙ্গে নিম্ন আদালতে অভিযোগকারীর গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করারও ব্যবস্থা করতে হবে। উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশই পালনে তৎপর হয়েছে রাজ্য পুলিশ।
“উপর মহল থেকে নির্দেশ এসেছে, সব অভিযোগকারীকে খুঁজে বার করে গোপন জবানবন্দি নথিবদ্ধ করাতে হবে। এই কাজ পুরোপুরি থানার উপরে না-ছেড়ে ডিএসপি বা অতিরিক্ত এসপি-পদের অফিসারদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে,” বলেন দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার এক পুলিশকর্তা। এবং সেই কাজের চাপ এমনই যে, জরুরি পারিবারিক কারণেও ছুটি মিলবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন ডিএসপি-পদের এক অফিসার। তিনি বলছেন, “চলতি সপ্তাহে একটু বাড়ি যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু যা চাপ, তাতে বড় সাহেব ছুটি দেবেন বলে তো মনে হয় না।”
কোনও কোনও পুলিশকর্তার দাবি, অনেক অভিযোগকারীই যে-ঠিকানা দিয়েছেন, সেখানে গিয়ে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নানা ধরনের সূত্র কাজে লাগিয়ে তাঁর বা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, ভোটের পরে অভিযোগ জানালেও অনেকেই আদালতে গিয়ে গোপন জবানবন্দি দিতে চাইছেন না। তবে তাঁদের নির্ভয়ে আদালতে উপস্থিত হতে বলা হচ্ছে বলেও রাজ্য পুলিশ সূত্রের দাবি।
অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের প্রশ্ন, নির্বাচনোত্তর হিংসা ও অশান্তি নিয়ে শোরগোল এতটাই যে, প্রধান বিরোধী দলের লোকজন প্রায় রোজই দিল্লি-দরবারে দৌড়চ্ছেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অভিযোগকারীদের হদিস পেতে পুলিশকে যে এ ভাবে হয়রান হতে হচ্ছে, তার কারণ কি এই যে, ওই সব অভিযোগের অনেকটাই জল মেশানো? জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের লোকজন নানা জায়গায় গিয়ে যদি সহজেই অভিযোগকারীদের হাতের কাছে পেয়ে গিয়ে থাকেন, সেই অভিযোগকারীদের নাগাল পেতে পুলিশকে নাজেহাল হতে হবে কেন? অভিযোগ সত্য হলে কমিশনের পরিদর্শনের পরে অভিযোগকারীদের তো আরও জোরের সঙ্গে পুলিশের কাছে গিয়ে নালিশ ও জবানবন্দি নথিভুক্তির জন্য সহযোগিতা করার কথা। সেটা হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নের সদুত্তরও কি এ ক্ষেত্রে জরুরি নয়?
শুধু জেলা পুলিশ তো নয়, খাস কলকাতা পুলিশের থানাগুলিতেও অভিযোগকারীর গোপন জবানবন্দি নথিবদ্ধ করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগকারী যাতে নির্ভয়ে গোপন জবানবন্দি দেন, সেটাও থানাগুলিকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হিসেব অনুযায়ী কলকাতায় নির্বাচনোত্তর হিংসা নিয়ে মোট অভিযোগের সংখ্যা ১৭২। তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে রিপোর্টে জানিয়েছে কমিশন। যদিও পুলিশি সূত্রের দাবি, কলকাতায় অশান্তির বিভিন্ন ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে রাজনৈতিক রং না-দেখেই।