ছবি: পিটিআই
দিল্লির নিজামুদ্দিনের তবলিগ-ই-জামাতের সমাবেশের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের যোগ বেড়েই চলেছে। সমাবেশে যোগদানকারী এবং তাঁদের সংস্পর্শে আসা লোকেদের খোঁজে এখন হন্যে পুলিশ, প্রশাসন। এমনকি, স্বাস্থ্য দফতরও।
পুলিশের এক সূত্রে খবর, শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় ২৬ জনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। চিহ্নিতদের সকলকেই নিভৃতবাসে (কোয়রান্টিন) পাঠানো হয়েছে। চিহ্নিতদের অধিকাংশকেই পাঠানো হয়েছে রাজারহাটের নিভৃতবাসে। বাকিদেরও সেখানে পাঠানো হচ্ছে। ওই সূত্রে খবর, কারওই শরীরে প্রাথমিকভাবে করোনার কোনও উপসর্গ মেলেনি।
এ দিন কলকাতার রাজারহাট কোয়ারান্টিন সেন্টারে পাঠানো ১৭জনের মধ্যে ৫জন খড়্গপুর মহকুমার বাসিন্দা। ওই ৫জনের মধ্যে ৪জন খড়্গপুর শহর ও ১জন খড়্গপুর গ্রামীণের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ। খড়্গপুর শহরের পাঁচবেড়িয়ার ৪নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক মহিলা ও দুই বালক-সহ ৪জন একই পরিবারের সদস্য। সপ্তাহ তিনেক আগে তাঁরা দিল্লির নিজামুদ্দিনে গিয়েছিলেন। পরে যান অজমেঢ় শরিফেও। দিন তিনেক আগে গাড়িতে খড়্গপুর ফিরেছেন। পরে পুলিশ তাঁদের নজরবন্দি করে। স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ হানিফ বলেন, “অজমেঢ় শরিফ যেতে হলে নিজামুদ্দিন মাজারে যেতে হয়। সেই নিয়মেই এই চারজন নিজামুদ্দিনে গিয়েছিল বলে জানতে পেরেছি। পরে জেলাশাসকের অনুমতি নিয়ে গাড়িতে খড়্গপুর ফিরে এসেছিলেন।”
দিল্লির সমাবেশে গিয়েছিলেন এমন ৬ জনের খোঁজ মিলেছে শুক্রবার। এর মধ্যে ৫ জন ঘাটাল মহকুমার একাধিক এলাকায় ছিলেন। ১ জন মেদিনীপুর মহকুমার এক এলাকায় ছিলেন। চিহ্নিত হননি, এমন কি কেউ এখনও জেলায় থাকতে পারেন? জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিভিন্ন সূত্র মারফত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আপাতত ২৬ জনকে চিহ্নিত করে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে।’’
সূত্রের খবর, শুধু যোগদানকারী নয়, সমাবেশে যোগদানকারীদের সংস্পর্শে কারা এসেছেন, তাঁদেরও খোঁজ চলছে। ইতিমধ্যে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকজনের খোঁজ মিলেছে। তাঁদের স্থানীয় নিভৃতবাস কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এঁদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে। খোঁজ পেতে পুলিশ-প্রশাসনকে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করছে মুসলিম কমিটি। মেদিনীপুর টাউন মুসলিম কমিটির সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘‘দিল্লির সমাবেশে কারা গিয়েছিলেন, তা জানার চেষ্টা করছি। খোঁজ মিললে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন, তা-ও জানার চেষ্টা করব। সবকিছুই পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়ে দেব।’’ আব্দুল বলেন, ‘‘শুনেছিলাম, শহরতলির পাশাপাশি মেদিনীপুর শহরেরও একজন না কি দিল্লির ওই সমাবেশে গিয়েছিলেন। আমরা তাঁর খোঁজ শুরু করেছি।’’
নিজামুদ্দিনের ঘটনা সামনে আসতেই জেলায় শোরগোল পড়ে। প্রথমে খড়্গপুর থেকে সাত ইন্দোনেশীয় মৌলবি-সহ ৯ জনকে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়। জেলার এক পুর-জনপ্রতিনিধিও না কি ইন্দোনেশীয় মৌলবির সংস্পর্শে এসেছেন বলে জল্পনা। পুলিশ, প্রশাসন অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয়। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারই খড়্গপুর পুরসভা চত্বর স্যানিটাইজ় করা হয়েছে। কেন? খড়্গপুরের পুরপ্রধান তথা বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘এই সময়ে স্যানিটাইজ় করা ভাল। তাই পুরসভা চত্বর বিশেষভাবে স্যানিটাইজ় করা হয়েছে।’’
দিল্লির সমাবেশ ফেরত
সকলের খোঁজ মেলা সম্ভব? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘পুলিশ, প্রশাসন খোঁজ নিচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরও
খোঁজ নিচ্ছে।’’