Srijato Bandopadhyay

Srijato: বিরোধীকে বলতে দাও, শিল্পীদের অভব্যতার দিন শেষ, সুমনের গানেই মনে করিয়ে দিলেন শ্রীজাত

কার উদ্দেশে এই লেখা লিখেছেন শ্রীজাত, পোস্টে সরাসরি কোথাও তার উল্লেখ নেই। একেবারে শেষ পরিচ্ছেদে কবীর সুমনের নামোল্লেখ রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৩০
Share:

ফেসবুকে কবি শ্রীজাতের দীর্ঘ পোস্ট নিয়ে আলোচনা

শিল্পের দোহাই দিয়ে যা খুশি করা যায় না। কেউ যত বড়ই শিল্পস্রষ্টা হোন না কেন, নিয়ম সবার জন্যই এক। শুক্রবার রাতে ফেসবুকে এই মর্মে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন কবি শ্রীজাত। পোস্টটি নিয়ে সাড়া পড়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দেওয়া শুরু হয়েছে নাগাড়ে।

Advertisement

কার উদ্দেশে এ কথা লিখেছেন শ্রীজাত? পোস্টে কোথাও তার উল্লেখ নেই। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমনকে নিয়ে ফেসবুকে এই লেখা লিখেছেন শ্রীজাত। সুমনেরই গানের একটি লাইন ‘বিরোধীকে বলতে দাও’ শিরোনামে পোস্টটি করেছেন শ্রীজাত।

পোস্টের শেষেও তিনি লিখেছেন, ‘মনে আছে, কবীর সুমন নিজের একখানা গানে লিখেছিলেন, বিরোধীকে বলতে দাও, বিরোধীকে বলতে দাও, তোমার ভুলের ফর্দ দিক। বাঙালি বোধহয় শুনেও এসব গানের অর্থ উপলব্ধি করতে পারেনি। পারলে আজ তার এই হাঁড়ির হাল হতো না।’ পাশাপাশিই সুমনের আরও একটি গানের লাইন উল্লেখ করে শ্রীজাত লিখেছেন, ‘তুমি গান গাইলে, বিশেষ কিছুই হল না, যা ছিল আগের মতো রয়ে গেল। বিস্ময়কর ভাবে, এ-গানও সুমনেরই রচনা। কী মিষ্টি সমাপতন, না?’

Advertisement

পোস্টের শেষের দিকে শ্রীজাত লিখেছেন, ‘এই যদি ইচ্ছে হয়, তাহলে চলুক। কিন্তু এই আমি পা নামিয়ে রাখলাম। আই পুট মাই ফুট ডাউন। টাকা খরচ ক’রে টিকিট আর ক্যাসেট কিনেছি। সত্তা বা চেতনা খরচ ক’রে নয়।’

কেন শ্রীজাত শিল্প এবং শিল্পী নিয়ে পোস্টটি করলেন? কেনই বা শেষে সুমনের দু’টি গানের লাইন উল্লেখ করলেন? অসমর্থিত সূত্রের দাবি, এর উৎস এক পুরুষ কণ্ঠের সঙ্গে একটি বাংলা চ্যানেলের সাংবাদিকের ফোন কথোপকথনের রেকর্ডিং। যেটি বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ‘ভাইরাল’। ওই কথোপকথনে ওই সাংবাদিককে ছাপার অযোগ্য ভাষায় কটূক্তি করতে শোনা গিয়েছিল এক ব্যক্তিকে। যাঁর কণ্ঠস্বর এবং বাচনভঙ্গির সঙ্গে সুমনের কণ্ঠের মিল রয়েছে। যদিও আনন্দবাজার অনলাইন ওই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেনি। ওই কথোপকথনে শোনা যাচ্ছে, ওই ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে সরাসরিই বলছেন, তাঁর ওই বক্তব্য যেন ‘ব্রডকাস্ট’ করা হয়।

বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ওই বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত প্রদান শুরু হয়েছে। বেশিরভাগই কথোপকথন শুনে অট্টহাস্য করেছেন। আবার অনেকে বলেছেন, ওই ব্যক্তি যে ভাষায় এবং ভঙ্গিতে কটূক্তি করেছেন, তা নজিরবিহীন। তেমনই অনেকে বলেছেন, তিনি যা বলেছেন, ঠিকই বলেছেন। বস্তুত, রাজ্যের এক মন্ত্রী ব্যক্তিগত পরিসরে ওই বক্তব্যকে সমর্থনও করেছেন। যদিও প্রকাশ্যে কেউই কিছু বলেননি।

তার পরেই শুক্রবার রাতে শ্রীজাতের পোস্ট। ঘটনাচক্রে, সুমন-শ্রীজাতের সম্পর্ক খুবই ‘মধুর’। একেবারে নাম করেই শ্রীজাত সম্পর্কে সুমন তাঁর ফেসবুকে অনেক ‘ভাল ভাল’ কথা লিখে থাকেন।

পোস্টের শুরুতেই শ্রীজাত লিখেছেন, ‘শিল্প করলেই সকলের মাথা কিনে নেওয়া যায় না, এই শিক্ষা আমরা কোনও দিন পাইনি। শিল্পী হলেই যে-কারও বাবা-মা তুলে চূড়ান্ত কুৎসিত কথা অবলীলায় উগরে দেওয়া যায় না, এই বোধও আমাদের কখনও হয়নি। আমরা মানে, নেহাতই এই বঙ্গদেশবাসী। বাকি দুনিয়ায় শিল্পীদের জন্য কিছু ছাড় থাকলেও, তাঁদের শত অন্যায়কে শিল্পের দোহাই দিয়ে অদেখা করার অলিখিত চুক্তি নেই। পশ্চিমে তো প্রশ্নই ওঠে না। সোজা ঘাড় ধরে কাঠগড়ায় তুলে দেবে, বাকি কথা তারপর। সে তুমি যত বড় শিল্পস্রষ্টাই হও, নিয়ম তোমার জন্যেও একই।’

শ্রীজাতের আরও আক্ষেপ, ‘আমরাই কেবল জাত হিসেবে এই নিয়মের বাইরে। আমরা শিল্পীকে সমস্ত ছাড় দিয়ে রেখেছি। গোড়া থেকেই ধরে নিয়েছি, শিল্পী অন্য গ্রহের জীব, তাই তার আচরণ বাকিদের সঙ্গে মিলবে না। এই ছাড় দিতে দিতে বিষয়টা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শিল্পীর সমস্ত রকমের অসভ্যতা, অন্যায় আর অপরাধকেও আমরা ছেড়ে দিতে শিখেছি, মেনে নিতে শিখেছি। কেননা, তিনি শিল্প করেন। তাই তিনি আমার মাথা কিনেছেন, আমার জীবন উদ্ধার করেছেন।’’

এর পরেই শ্রীজাত লিখেছেন, ‘তাই তিনি মঞ্চ থেকে নোংরা অঙ্গভঙ্গি করতেই পারেন, রাস্তায় মাতলামো করে কাউকে অকারণ চড় কষাতে পারেন, সগৌরবে গার্হস্থ্য হিংসায় অংশ নিতে পারেন, প্রকাশ্যে খুনের হুমকি দিতে পারেন, অনর্গল মিথ্যা বলতে বা লিখতে পারেন, এমনকি, দাঙ্গা উসকে দিতে পারেন বা ধর্ষণের ভয় দেখাতে পারেন। এবং এই ধারাবাহিক পরিকল্পিত অসভ্যতার প্রত্যেকটির পরে বুক বাজিয়ে বলতে পারেন, ‘বেশ করেছি’। কেননা তিনি জানেন, আমরা দুর্বল। আমরা কেউ একজনও ঘুরে দাঁড়িয়ে বলব না, ‘মোটেই বেশ করেননি, অন্যায় করেছেন। ক্ষমা চান। কাউকে অপমান করবার অধিকার আপনাকে শিল্প দেয়নি’। উল্টে আমরা তার এই কদর্য আচরণকে পরতে পরতে গ্লোরিফাই করব, যেন শিল্পী হবার শর্তই হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত স্বেচ্ছাচার।’

প্রবল আক্রমণাত্মক কবি লিখেছেন, ‘কেউ কেউ সারাজীবন অভব্যতা আর শয়তানি করে যাবে আর আমরা সুখী গৃহকোণে তার শিল্প ধুয়ে ক্ষমার জল খাবো, এসব দিন শেষ না হলে বিপদ আমাদেরই। কেউ যদি আমার বিরোধীও হন, তাঁর প্রস্তাবে আমি যদি অসম্মতও হই, তবে তা প্রত্যাখ্যানেরও দস্তুর আছে। এমনকি, অপ্রাসঙ্গিক থাকতে থাকতে হতাশ হয়ে হেডলাইন হয়ে ওঠার তীব্র খিদে থেকেও তাঁকে অসম্মান করার, অসাংবিধানিক ভাষায় গরগরে আক্রমণ করার অধিকার আমার নেই।’

এখন দেখার, সুমনের দিক থেকে পাল্টা পাটকেল আসে কি না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement