শনিবার মুর্শিদাবাদের ভরতপুর ২ ব্লকের মালিহাটি পঞ্চায়েতের সদস্যেরা ‘ইস্তফা’ দেন। প্রতীকী ছবি।
আবাস প্রকল্পে আগের তালিকার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ নাম বাদ গিয়েছে মুর্শিদাবাদের ভরতপুর ২ ব্লকের মালিহাটি পঞ্চায়েতে। শনিবার সেই পঞ্চায়েতের সদস্যেরা ‘ইস্তফা’ দেন। তবে তা গৃহীত হয়নি। রবিবার তৃণমূল সূত্র জানিয়েছে, ইস্তফা দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছেন ওই পঞ্চায়েতের সদস্যেরা। পঞ্চায়েত প্রধান সৈয়দ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘‘সোমবার জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরে সিদ্ধান্তের কথা জানাব।’’ বিরোধীদের দাবি, যে জনরোষের ভয় এই পঞ্চায়েতের সদস্যেরা পাচ্ছেন, তা জায়গায় জায়গায় দেখা যাবে। তবে তৃণমূল দাবি করেছে, স্বচ্ছতার সঙ্গেই আবাস প্রকল্পের তালিকা তৈরি হচ্ছে।
এ দিন, ভরতপুর ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানও বলেন, “ওই পঞ্চায়েতের ১৭ জনের মধ্যে ১১ জন সদস্য ইস্তফা দিতে রাজি নন। সে কথা তাঁরা জানিয়েছেন। আমাদের নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘর দিচ্ছেন, তাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।’’ দক্ষিণ মুর্শিদাবাদের তৃণমূল জেলা সভাপতি শাওনি সিংহ রায়ের দাবি, ‘‘যা ঘটেছে তাতে দলের কোনও ক্ষতিও হবে না।” ভরতপুরের বিধায়ক তৃণমূলের হুমায়ুন কবীর বলেন, “যে ইস্তফাপত্র প্রশাসন গ্রহণ করেনি, তা আবার প্রত্যাহারের কথা আসছে কেন!”
তবে এলাকার মানুষের দাবি, যোগ্য ব্যক্তিদের নাম আগের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান তালিকায় অযোগ্য ব্যক্তিদের নাম রয়েছে বলেও অভিযোগ। তৃণমূল সূত্রের খবর, এর ফলে এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভের শিকার হতে পারেন ভেবেই তৃণমূলের দখলে থাকা ওই পঞ্চায়েতের প্রধান সহ সব সদস্যই শনিবার পদত্যাগ করতে যান ভরতপুর ২ ব্লক দফতরে। কিন্তু বিডিও জানান, সে দিন সরকারি ভাবে ছুটি ছিল, তা ছাড়া, পদত্যাগ করার নিয়মও মানা হয়নি। তাই ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়নি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, ‘ইস্তফা’ দেওয়ার আগে ব্লক অফিস চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রধান তৃণমূলের সৈয়দ নাসির উদ্দিন। বিধায়ক হুমায়ুনের বক্তব্য, “প্রধান সৈয়দ নাসির উদ্দিন এক জন ভদ্রলোক, তিনি যে ভাবে পঞ্চায়েতটিকে আগলে রেখেছেন, এলাকার বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন; তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে, সেই কারণে চোখে জল এসেছিল। সেটার উল্টো মানে করার কোনও কারণ নেই।”
তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, যত সময় গড়াবে, জনরোষের মুখে পড়বে তৃণমূল। সুকান্ত বলেন, ‘‘সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআরও করা হতে পারে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘জনরোষের মুখে কোথাও কোথাও তৃণমূল নেতারা বলছেন, আমরা নই, তালিকা করেছেন বিডিও। তা হলে সেই বিডিও-দের নাম প্রকাশ করছেন না কেন?’’
রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘তালিকা নিয়ে যা অভিযোগ রয়েছে, রাজ্য সরকার খতিয়ে দেখছে। স্বচ্ছ ভাবে তালিকা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এই নিয়ে বিরোধীদের হইচই করার কিছু নেই। আর বিজেপি নেতা ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের নামও তো তালিকায় রয়েছে!’’