প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র ।
এক সপ্তাহে তিন বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসতে চলেছেন বাংলায়! আগামী ১ মার্চ এবং ২ মার্চ বঙ্গ সফরে আসতে পারেন মোদী। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে তেমনটাই। বিজেপি সূত্রে খবর, আগামী ১ মার্চ এবং ২ মার্চ রাজ্যের দুই লোকসভা কেন্দ্র আরামবাগ এবং কৃষ্ণনগরে সভা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দিল্লি থেকে আগেই জানিয়েছিলেন, সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৬ মার্চ বারাসতের কাছারি মাঠে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্য বিজেপির পরিকল্পনা, সেই সভায় সন্দেশখালির ‘নির্যাতিতা’-দের উপস্থিত করানো হবে। আলাদা মঞ্চ করে বসানো হবে তাঁদের। সেখানে মুখ ঢেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হবেন তাঁরা। কিন্তু সেই মহিলা সম্মেলনের আগে মোদী আরও দু’বার বঙ্গ সফরে আসতে পারেন বলে জানা গিয়েছে বিজেপি সূত্রে।
বিজেপির যা পরিকল্পনা, তাতে ১ মার্চ আরামবাগ এবং ২ মার্চ কৃষ্ণনগরে সভা করতে পারেন মোদী। রাজ্য বিজেপির নেতারা জানাচ্ছেন, এ রকম পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে কথাবার্তাও হয়েছে। কিন্তু যে হেতু প্রধানমন্ত্রী, তাই আগে থেকে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর জনসভার জন্য কেন আরামবাগ এবং কৃষ্ণনগর লোকসভাকেই বেছে নেওয়া হচ্ছে? বিজেপি সূত্রে খবর, গত লোকসভায় আরামবাগে খুব কম ব্যবধানে হেরেছিল বিজেপি। লোকসভায় হারলেও আরামবাগে শক্ত ঘাঁটি রয়েছে পদ্মশিবিরের। তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেও। আরামবাগ লোকসভার মধ্যে যে সাতটি বিধানসভা রয়েছে, তার মধ্যে আরামবাগ, খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়া— এই চার বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছিল বিজেপি। বাকি তিন বিধানসভা হরিপাল, তারকেশ্বর এবং চন্দ্রকোনায় তৃণমূল জিতেছিল। বিধানসভার নিরিখে হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, আরামবাগ লোকসভায় ভোটের অঙ্কে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। কয়েক দিন আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক সভা করেছিলেন আরামবাগে। প্রথমে হুগলি জেলার পান্ডুয়া বা বলাগড়ে সেই সভা করার কথা ছিল। পরে জায়গা বদল করা হয়। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, ‘দুর্বল আরামবাগে জোর দিতেই’ মমতা সেখানে প্রশাসনিক সভা করেছিলেন। একই ভাবে মোদীও আরামবাগকে পাখির চোখ করতে চাইছেন বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
অন্য দিকে, কৃষ্ণনগর আসন নানা সমীকরণে বিজেপির জন্য উর্বর। অতীতে লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর থেকে জিতেও এসেছে বিজেপি। ১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর থেকে বিজেপির সাংসদ হন জলু মুখোপাধ্যায়। তখন বাংলায় বিজেপির এত পোক্ত সংগঠন বা জনভিত্তি ছিল না। পাশাপাশি, কৃষ্ণনগর থেকে তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে সাম্প্রতি অতীতে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাকেও কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের অনেকে মনে করছেন, বিবিধ সমীকরণে কৃষ্ণনগর লোকসভা পদ্মশিবিরের জন্য ভাল আসন। বিজেপি যে কৌশলে এগোচ্ছে, তাতে যত দিন যাবে, মেরুকরণ তত তীব্র হবে বলেও অনেকের মত। হতে পারে সেই প্রেক্ষাপটেই লোকসভা ভোটের আগে সভা করার জন্য কৃষ্ণনগরকে বেছে নিয়েছেন মোদী।পাশাপাশি, লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের আগেই পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে নিজেদের জমি আরও শক্ত করতে মোদী দুই লোকসভায় প্রচারে নামছেন বলেও মনে করছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজ্যে আসার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। ওই দিন নদিয়ার মায়াপুরে ইস্কনের মন্দিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। এর পর রানাঘাট-সহ আশপাশের কয়েকটি লোকসভার বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল। সেই সফর বাতিল হয়েছে। এই নিয়ে খুব একটা মুখ খুলতে চাইছেন না রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তবে বিজেপি সূত্রে খবর, সন্দেশখালিকাণ্ডের জেরেই রাজ্য সফর আপাতত স্থগিত রাখলেন শাহ। পাশাপাশি, বিজেপি সূত্রে এ-ও খবর যে, রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দও চাইছিলেন না, যে এই সময় বঙ্গ সফরে আসুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সন্দেশখালির আন্দোলনকে বৃহত্তর করে তুলতে প্রায় প্রতি দিনই রাস্তায় নামছেন তাঁরা। তাই এই সময় শাহ যদি রাজ্য সফরে আসেন, তা হলে তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতে হবে রাজ্য নেতৃত্বকে। ফলে তাঁদের আন্দোলনে ভাটা পড়তে পারে। আপাতত রাজ্য বিজেপির লক্ষ্য, মোদীর দুই লোকসভার জনসভা এবং ‘মহিলা সম্মেলন’ সফল করা।