হাইকোর্ট আর রাজ্যকে বাদ দিয়েই উদ্বোধন

শুক্রবার ময়নাগুড়ির সভা থেকে সেই সার্কিট বেঞ্চেরই উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

চূড়াভাণ্ডার শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

দলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ।

দু’দিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে সার্কিট বেঞ্চকে ছাড়পত্র দেওয়ার সময়েই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার ময়নাগুড়ির সভা থেকে সেই সার্কিট বেঞ্চেরই উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেখানে রাজ্য সরকারের তো বটেই, হাইকোর্টেরও কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। এ দিনের সভা থেকে রিমোট কন্ট্রোলে বেঞ্চের উদ্বোধন করে মোদী দাবি করেন, গত ২০ বছর ধরে রাজ্য বা কেন্দ্রের ডান-বাম কোনও সরকারই এই বেঞ্চের জন্য কিছু করেনি। তাঁর সরকারই ‘উত্তরবঙ্গের কয়েক দশকের স্বপ্ন পূরণ করল’। যা শোনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘বর নেই, কনে নেই। ব্যান্ড পার্টি ভাড়া করে এনে ভোটের আগে প্রচারের দামামা বাজানো হল!’’

Advertisement

মাসচারেক আগে এই সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধনের ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য উদ্যোগী হয়েছিলেন। দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীও উদ্বোধন থাকবেন বলে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু দিল্লির ছাড়পত্র না আসায় তখন তা হয়নি। এ বারে হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে সরাসরি কর্মসূচি চলে আসে রাজ্যের কাছে। নবান্নের দাবি, রাজ্য সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আগে আলোচনাই করেনি কেন্দ্র। ফলে শুরু হয় বিতর্ক। উদ্বোধনের কিছুক্ষণের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী তাই বলেন, ‘‘সার্কিট বেঞ্চ তো হাইকোর্টের। উদ্বোধনে হাইকোর্টের বা রাজ্য সরকারের কাউকে ডেকেছিলেন ওঁরা? উদ্বোধন যে হবে, সেটা কি হাইকোর্ট বা রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে?’’

কলকাতা হাইকোর্ট সূত্রের খবর, শুক্রবার দুপুর ২টো ৪০ মিনিটে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারকে তাঁর সচিবালয়ের এক আধিকারিক কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক থেকে পাঠানো একটি ই-মেল দেন। তাতে ৭ ফেব্রুয়ারির তারিখ দেওয়া ছিল। ওই ই-মেলে প্রধান বিচারপতিকে সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়। সূত্রের খবর, যখন বার্তা আসে তখন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার প্রশ্নই ছিল না। ‘দুঃখপ্রকাশ’ করে আইন মন্ত্রককে বিচারপতি সমাদ্দারের অপারগতা জানিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

জলপাইগুড়ির আইনজীবী মহলের একাংশের বক্তব্য, বেঞ্চের উদ্বোধন হয়েছে এবং ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তা চালু হয়ে গিয়েছে বলে কেন্দ্র জানালেও, কবে থেকে কাজ শুরু হবে, তা নিয়ে এ দিন নীরব ছিলেন মোদী। কাজেই বেঞ্চ চালু করা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা রইলই। মুখ্যমন্ত্রীও এ দিন বলেন, ‘‘গত চার মাস ধরে এর (সার্কিট বেঞ্চের) কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। যাঁরা ওখানে কাজ করবেন, সেটা তো হাইকোর্ট ঠিক করবে। সার্কিট বেঞ্চের জন্য কোনও লোকও তো নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সার্কিট বেঞ্চের বাস্তবায়ন রাজ্য সরকার করবে।’’

তেরো বছর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা যে বেঞ্চের প্রস্তাব পাশ করেছিল, তা এত দিনেও হয়নি কেন— এই প্রশ্ন তুলে মোদী এ দিন বলেন, ‘‘এত বছরে রাজ্য বা কেন্দ্রের কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল— কোনও সরকারই মানুষের কষ্ট বুঝতে চায়নি। আমরাই জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, কালিম্পং, দার্জিলিঙের বাসিন্দাদের মামলার জন্য কলকাতায় যাওয়ার দুর্ভোগ লাঘব করতে পেরেছি।’’ মোদী আরও অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে হাইকোর্ট থেকে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি।

জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই সার্কিট বেঞ্চ তৈরি করতে রাজ্য ৩০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কেন্দ্র এক পয়সাও দেয়নি। জমি, টাকা, পরিকাঠামোর পুরো কাজটাই তো রাজ্য সরকার করেছে।’’ রাজ্য প্রশাসনের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, এর পরেও মোদী কী ভাবে বলেন, রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে কিছু করেনি?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement