প্লেনামেও পর্দায়, বাংলা ফেলে বুদ্ধর চোখে কিউবা

মেক্সিকোর ছোট্ট বন্দর শহরে ১৯৫৬ সালের নভেম্বর। প্রয়োজনীয় উপকরণ গুছিয়ে নিয়ে চে গ্যেভারা এবং সহযোদ্ধাদের জলযানে তুলে দিয়ে রাত দু’টো নাগাদ নিজের বন্দুক হাতে নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল ৬ ফিট ২ ইঞ্চির চেহারা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

মেক্সিকোর ছোট্ট বন্দর শহরে ১৯৫৬ সালের নভেম্বর। প্রয়োজনীয় উপকরণ গুছিয়ে নিয়ে চে গ্যেভারা এবং সহযোদ্ধাদের জলযানে তুলে দিয়ে রাত দু’টো নাগাদ নিজের বন্দুক হাতে নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল ৬ ফিট ২ ইঞ্চির চেহারা। শেষ মুহূর্তে একটা সাঙ্কেতিক বার্তা পাঠিয়ে রাখা হল কিউবার উপকূলে অপেক্ষমান সতীর্থদের জন্য— ‘চাহিদার বইটি ছাপা শেষ’। মধ্যরাতের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রে যাত্রা শুরু করল ‘গ্র্যানমা’।

Advertisement

যে যাত্রা আসলে ছিল কিউবার বিপ্লবী যুদ্ধের বোধন। বাতিস্তার একনায়কতন্ত্রী শাসনকে বিসর্জন দিয়ে সে যুদ্ধ নাম তুলেছিল ইতিহাসে। চে এবং ফিদেল কাস্ত্রোর বৈপ্লবিক বন্ধুত্বও তখন থেকে ঐতিহাসিক উপাখ্যান। কিন্তু ৬০টি হেমন্ত পরে সেই ইতিহাস হঠাৎ ফিরে দেখছেন কে? উত্তর— বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য!

উত্তরটাই আসলে প্রশ্ন! বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের হাতে ফের পর্যুদস্ত হওয়ার পরে গোটা বাম শিবির যখন প্রায় চার দেওয়ালে মুখ লুকিয়েছে, সিপিএমের জনপ্রিয়তম মুখ তখন চোখ ফিরিয়েছেন সুদূর মেক্সিকো এবং কিউবার রোমান্টিক বিপ্লবের কাহিনির দিকে! কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে এ রাজ্যকে ‘নরককূণ্ড’ থেকে উদ্ধারের লক্ষ্যে পার্ক সার্কাস ময়দানে রাহুল গাঁধীর হাত ধরে দাঁড়াতে যিনি কার্পণ্য করেননি, ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকেই তাঁর তরফে শুধু অখণ্ড নীরবতা। আম জনতা দূরের কথা, দলের কর্মীদের কাছে পর্যন্ত তাঁর আর কোনও মতামত পৌঁছয়নি। সাম্প্রতিকতম সুযোগ ছিল সিপিএমের রাজ্য প্লেনাম। সেখানেও এমনই আড়ালে থেকে গেলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যে, সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা তাঁর নাগালই পেল না!

Advertisement

অন্তরালে বসেই এ বার দলীয় মুখপত্রের শারদসংখ্যার জন্য বুদ্ধবাবু লিখেছেন, ‘চাহিদার বইটি ছাপা শেষ’। তাঁর সিঙ্গুর-স্বপ্নের কফিনে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি শেষ পেরেকটা গেঁথে দেওয়ার পরে দলের কর্মী-সমর্থকেরা তাঁর বয়ান শোনার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। তিনি না প্রকাশ্যে কোনও বিবৃতি দিয়েছেন, না প্লেনামে বলার সুযোগ চেয়েছেন। উল্টে পুজোর সময়ে তাঁর কলমে হঠাৎ কাস্ত্রো-মাহাত্ম্য দলেরই বড় অংশকে চমকে দিয়েছে!

সিপিএম সূত্র বলছে, প্লেনামের প্রথম দিন প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে মঞ্চ সংলগ্ন ছোট্ট ঘরে বসেছিলেন বুদ্ধবাবু। তা-ও প্রথমার্ধটুকু। প্রতিনিধিদের সিংহভাগই তাঁকে চোখের দেখাও দেখতে পাননি। বেরিয়ে গিয়েছেন মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময়ে। দ্বিতীয় দিনও একই ঘটনা। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বা কেরলের পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবি যখন পরিচিতদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করছেন, বুদ্ধবাবু তখন প্লেনাম থেকে আলোকবর্ষ দূরে!

দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘বুদ্ধদা নিজে থেকেই দলের পদ ছেড়ে দিকে চেয়েছেন অনেক দিন। নিজের ভূমিকাকে পরামর্শদাতার জায়গায় নিয়ে চলে গিয়েছেন। তবু তাঁর মতো ব্যক্তিত্ব এখনও দলে নেই। তাঁর কাছ থেকে কিছু কথা কর্মী-সমর্থকেরা শুনতে চান।’’ শুনতে চান তো ঠিকই। কিন্তু শোনাবে কে? আগেই ঘনিষ্ঠ মহলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমি লালুপ্রসাদ বা মুলায়ম নই। আবার বিসমিল্লায় গিয়ে শুরু করা আমার দ্বারা সম্ভব নয়! যাঁদের হাতে এখন পার্টি আছে, তাঁরাই করবেন, যা করার।’’ আর বিধানসভা ভোটের পর থেকে তো তিনি প্রায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে।

কাস্ত্রোর সেই সাঙ্কেতিক ভাষাতেই বললে, প্লেনামের অভিজ্ঞতা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে— সিপিএমের জন্য ‘চাহিদার বইটি কি ছাপা শেষ’?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement