শিলিগুড়ি সার্কাস ময়দানে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
শিলিগুড়িতে প্রস্তাবিত সাফারি পার্ককে বিশ্বমানের গড়ে তুলতে সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়ার হবে বলে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার শিলিগুড়ির সার্কাস ময়দানে সরকারি সভা থেকে এই পরিকল্পনা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পার্ক তৈরিতে ইতিমধ্যে ২৬৫ কোটি টাকা রাজ্য সরকার বরাদ্দ করেছে বলেও সভায় জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে শিলিগুড়িতে প্রস্তাবিত ফিল্ম সিটির কাজও দ্রুত শেষ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর আশা, ফিল্ম সিটি এবং সাফারি পার্ক এই দুইয়ের হাত ধরে উত্তরবঙ্গে ‘বিনোদন শিল্পে’র প্রসার ঘটবে।
সম্প্রতি সিঙ্গাপুর সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানকার সাফারি পার্ক ঘুরে দেখেন। শিলিগুড়ির সোরিয়া পার্কের প্রস্তাবিত সাফারি পার্ককে সেই ধাঁচেই গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে কারণেই সেখানকার বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সিঙ্গাপুরের পার্কে দেখে এলাম প্রকৃতির মধ্যে জীবজন্তুরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। শিলিগুড়ির পার্কও তেমন ভাবে গড়ে তোলা হবে। আফ্রিকান সাফারির মতো সেই পার্কে জীবজন্তুরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াবে। এই পার্কের জন্য ২৬৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। পার্ক দেখতে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসবেন উত্তরবঙ্গে। ফিল্মসিটিও তৈরি হচ্ছে শিলিগুড়িতে। বিনোদন শিল্প একটা বড় শিল্প। আগে হলিউড বলিউড এখানে আসত না, এখন আসে। বিনোদন শিল্পকে ঘিরে একে ঘিরে হোটেল, দোকান, ব্যবসা তৈরি হয়।”
বছর তিনেক আগে শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া কাওয়াখালিতে ৮৪ একর জমিতে ফিল্মসিটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। এসজেডিএ-র তরফে জমিটি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও, তারপরে আর কাজ এগোয়নি বলে অভিযোগ। পাঁচিল ঘেরা জমিতে নির্মাণ কাজও শুরু হয়নি। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী গত জুন মাসে পাহাড় সফরে এসে সাফারি পার্কের শিলান্যাস করেন। শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া মহানন্দা অভয়ারণের প্রায় ৬০০ একর জমিতে ওই পার্ক তৈরি হওয়ার কথা। বিশেষ ধরনের গাড়ি করে পর্যটকরা পার্কের ভিতরে ঘুরে জীবজন্তুদের দেখার সুযোগ পাবেন।
মুখ্যমন্ত্রী সাফারি পার্কে জীবজন্তুদের প্রকৃতির মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা জানানোর, ২৪ ঘণ্টা আগেই উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছে বলে রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন দাবি করেছেন। সে কারণে হাতির সংখ্যা কমাতে জন্মনিয়ন্ত্রণের কথাও বনমন্ত্রী জানান। একদিকে, যখন রাজ্যের বন দফতর জঙ্গল সঙ্কুচিত হওয়ায় হাতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণের চিন্তাভাবনা করছে, তখন সাফারি পার্কে জীবজন্তুদের অবাধ গতিবিধি সম্ভব হবে কীভাবে সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম টু্যর অপারেটর সম্রাট সান্যাল বলেন, “সাফারি পার্ক তৈরি হলে উত্তরবঙ্গের পর্যটন চিত্র পুরোপুরি বদলে যাবে। সেই সঙ্গে ফিল্মসিটি তৈরি হলে পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণের কেন্দ্র তৈরি হবে। শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের পর্যটন অর্থনীতির একটি নতুন দিশার খোঁজ মিলবে।”
এ দিন বিকেল তিনটের পরে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে শিলিগুড়ির সার্কাস ময়দানের সভায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিবহণ দফতরে প্রধান সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরকারি সভায় উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। আলিপুরদুয়ারের সাংসদ দশরথ তিরকে, জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এবং প্রশাসনিক আধিকারিকরা সভায় ছিলেন।
এ দিনের সভায় ৫০টি সরকারি বাসের উদ্বোধন, শিলিগুড়ি হাসপাতালে সিটি স্ক্যান পরিষেবা চালুর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। জলপাগুড়ির রাজবাড়ি দিঘি সংস্কার কাজের সূচনা থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী, ইন্দিরা আবাস যোজনার চেক, মিটার ট্যাক্সির অফার লেটার, পাম্পসেট, পাওয়ার টিলার, সাইকেলও মঞ্চ থেকে বিলি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কাওয়াখালি উপনগরী তৈরির জন্য অধিগৃহিত জমির জমিহারাদের নিজস্ব জমির লিজ দলিলও তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জমিহারাদের জমির দলিল ফিরিয়ে দিয়ে একবার ফের জোর করে কোনও সরকারি প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ৫০০টি মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করে ১ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীদের বিনে পয়সায় দোকান দিয়ে অন্তত পাঁচ লক্ষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে সরকারি সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান। সভা সেরে কালিম্পঙে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ, মঙ্গলবার কালিম্পঙে জিটিএ-এর সঙ্গে রাজ্যের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে।