জাত-পাতের অভিযোগে কলকাতা হাই কোর্টের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা। নিজস্ব চিত্র।
আইনের চোখে সবাই সমান। জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং লিঙ্গের মধ্যে আইন কারও বিভেদ করে না। অথচ আইনের পীঠস্থান বলে পরিচিত আদালতের কাছে বিচার পেতে গেলে জানাতে হচ্ছে জাতির বিবরণ। এই নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের বিরুদ্ধেই জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল। মামলাটি করেন বিজয়কুমার সিঙ্ঘল নামে এক ব্যক্তি। তাঁর মতে, ‘‘স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে কোনও ব্যক্তি আদালতে মামলা করার জন্য নিজের জাতের পরিচয় দেবেন এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক!’’ এতে মামলাকারীর ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন। আগামী মঙ্গলবার হাই কোর্টের বিরুদ্ধে করা এই মামলাটির শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। মামলাটি শুনবে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ।
হাই কোর্টে যে কোনও মামলা রুজু করতে গেলে মামলকারী বা আবেদনকারীকে একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়। সেই ফর্মের ৬ নম্বর প্যারায় জাতি কী, তা লিখতে হয় মামলাকারী বা আবেদনকারীকে। ফর্মের এই অংশটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জনস্বার্থ মামলকারী বিজয়। তাঁর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজির মতে, ‘‘কোনও ব্যক্তি বিচার চাইতে আদালতে আসেন। নিয়ম মেনে তাঁকে মামলা দায়ের করতে হয়। কিন্তু মামলা দায়েরের জন্য জাতির উল্লেখ কেন প্রয়োজন তা পরিষ্কার নয়।’’ তিনি জানান, ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা বা না করার বিষয়টি সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব অধিকার। সামাজিক শ্রেণির মধ্যে কোনও ব্যক্তির জাতির পরিচয় রয়েছে। ফলে এ ক্ষেত্রে যে কোনও মামলাকারীকে আদালতই বলছে জাত-পাতের পরিচয় প্রকাশ করতে। এটা হাই কোর্টের কাছে কাম্য নয়।
জনস্বার্থ মামলকারী বিজয় নিজেকে সমাজসেবী এবং সঞ্জয় গান্ধী মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। এই মামলায় তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাংলার নবজাগরণ, শুধুমাত্র বাংলার সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিজীবী অংশেরই উত্থান ঘটায়নি, ওই পরিবর্তন আধুনিক ভারতীয় সমাজের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। সেখানে কলকাতা হাই কোর্টেরও অবদান ছিল। এই হাই কোর্ট শুধু ভারতের প্রাচীনতম হাই কোর্ট বলেই পরিচিত নয়। বরং, এটি ভারতীয় সমাজের বিবর্তন এবং অগ্রগতিতেও সক্রিয় অবদান রেখে পরিচিত হয়েছে।’’ মামলাকারীর আবেদন, বিচারপ্রার্থীদের বর্ণের পরিচয় তুলে দিক এই আদালত।
প্রসঙ্গত, হাই কোর্টের ওই ফর্মে জাতের উল্লেখ বাধ্যতামূলক কি না, তা বলা হয়নি। আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, মামলা দায়ের করতে গেলে বাধ্যতামূলক ভাবে জাতি জানাতে হবে কি না, সে বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা ওই ফর্মের কোথাও লক্ষ করা যায়নি। এ নিয়ে এত দিন কোনও মামলকারী অভিযোগও করেননি। এখন যে হেতু বিষয়টি নিয়ে কেউ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, তাই আদালতই কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার। তাঁদের বক্তব্য, এই বিষয়টির সঙ্গে বিচারের কোনও সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে হয় না। বিচার চলে নিজস্ব পদ্ধতিতে।