রাজ্য জুড়ে বহু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফার্মাসিস্টদের চাপ দিয়ে চিকিৎসকের কাজ করানো হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ এনেছে খোদ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের অন্তর্গত সরকারি ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যভবনে এই অভিযোগ জমা দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে বিভিন্ন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্যকর্তা বা ব্লক মুখ্য স্বাস্থ্যকর্তারা তাঁদের হুমকি দিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আউটডোর চালাতে ও রোগী দেখতে বাধ্য করছেন।
কেন? সরকারি ফার্মাসিস্টদের বক্তব্য, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের অভাব বিপুল। সেই কারণে স্বাস্থ্য কর্তারা তাঁদের চিকিৎসার কাজে ঠেলে দিচ্ছেন। কিন্তু যে স্বাস্থ্য দফতর ভুয়ো চিকিৎসক ধরার কাজে সিআইডি-কে সহযোগিতা করছে, তারা কী করে ফার্মাসিস্টদের দিয়ে চিকিৎসা চালানোকে মেনে নিচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি ফার্মাসিস্টরা। তাঁদের প্রশ্ন, ডাক্তারি ডিগ্রি ছাড়া রোগী দেখলে ফার্মাসিস্ট কি ভুয়ো ডাক্তারের স্তরে পড়বেন না? সে ক্ষেত্রে কেউ ফার্মাসিস্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে স্বাস্থ্য দফতর কি পাশে দাঁড়াবে? সরকারি ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অভয় মাইতি বলেছেন, ‘‘রোগী না-দেখলে কর্তৃপক্ষ হুমকি দিচ্ছেন আর রোগী দেখতে গিয়ে কোনও ভুল হলে গণধোলাই এবং জেলে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী এই অভিযোগ শুনে বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তারের অভাব রয়েছে। তবে সেই জন্য ফার্মাসিস্টদের ডাক্তারের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে জানা ছিল না। বিষয়টা খতিয়ে দেখতে বলেছি।’’ কোন কোন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁদের ডাক্তারের কাজ করতে হচ্ছে, তার তালিকা স্বাস্থ্যভবনে জমা দিয়েছেন ফার্মাসিস্টরা। এর মধ্যে প্রায় ২০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (পিএইচসি) রয়েছে মুর্শিদাবাদেই। এ ছাড়া হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূমেও প্রচুর প্রাথমিক
স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে।
মুর্শিদাবাদের সিএমওএইচ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘যখন ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না, তখন তো ভাগাভাগি করে কাজ না-করে গতি নেই। নার্সরাও তো অনেক জায়গায় রোগী দেখছেন।’’ তিনি জানান, মুর্শিদাবাদে ১২২ জন মেডিক্যাল অফিসার (এমও) দরকার। অতি সম্প্রতি নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল ৫০ জনকে। যোগ দিয়েছেন মাত্র ২৫ জন। মাস দু’য়েক আগেও চুক্তির ভিত্তিতে ৪০ জনকে নেওয়া হয়। তার মধ্যে মাত্র ৬ জন কাজে যোগ দেন। দু’ সপ্তাহের মধ্যে ৫ জন চাকরি ছেড়ে দেন। হাওড়া জেলার সিএমওএইচ ভবানী দাসেরও বক্তব্য, ‘‘সম্প্রতি ৬২ জনের জায়গায় আমাদের জেলায় মাত্র ২৩ জন এমও কাজে যোগ দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে ফার্মাসিস্টদের দিয়ে ডাক্তারের কাজ চালাতে হচ্ছে।’’ বীরভূমের সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি-ও বলেন, ‘‘ফার্মাসিস্টদের যুক্তি একেবারে ঠিক। কিন্তু আমরাও অসহায়। এই জেলায় ২৫ জন এমওকে সম্প্রতি নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। যোগ দেন তাঁদের ভিতর মাত্র ৭ জন। ফার্মাসিস্টরা কাজ না করলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে।’’
যেমনটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ব্লকের চুয়া পিএইচসি-তে। গত জুলাই মাসে সেখানকার একমাত্র চিকিৎসক চাকরি ছেড়ে দেন। কর্তৃপক্ষ ফার্মাসিস্ট মধুসূদন মণ্ডলকে আউটডোর চালাতে বলেন বলে অভিযোগ। মধুসূদন অস্বীকার করলে জুলাই মাস থেকে ওই পিএইচসি পুরোপুরি বন্ধ। মধুসূদনের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর আমাদের হুমকি দিয়ে ডাক্তারের কাজ করাচ্ছে। আমি তার প্রতিবাদ করেছি। আমি অন্যায় করে থাকলে সরকার আমাকে শাস্তি দিক।’’