প্রতীকী ছবি।
ভোর তখন সাড়ে পাঁচটা। সবে দিনের আলো ফুটেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, হেলমেট পরা এক ব্যক্তি হাতে ধরা প্লাস্টিকের প্যাকেট থেকে তরল ভর্তি একটি বোতল বার করলেন। তার পরে এ দিক-ও দিক দেখে বোতলের মুখে লাগানো কাপড়ের সলতেতে আগুন লাগিয়ে ছুড়ে দিলেন রাস্তার ধারে একটি দোতলা বাড়ির নীচের ঘর লক্ষ্য করে।
কোনও শব্দ না হলেও মুহূর্তের মধ্যে জ্বলে উঠল ঘরটি। আগুনে পুড়তে থাকল ঘরের পাশে রাখা পুরনো একটি মোটরবাইক সমেত পরিত্যক্ত আসবাব ও আবর্জনা। কিছু ক্ষণ পরেই দেখা গেল, ওই ব্যক্তি ফের ব্যাগ থেকে আর একটি সাদা বলের মতো জিনিস বার করে ছুড়ছেন ওই বাড়ি লক্ষ্য করে। কিন্তু তা থেকে কিছু হল কি না, সেটা বোঝা গেল না। সব শেষে দেখা গেল, ঘুমিয়ে থাকা পাড়ার গলি দিয়ে শান্ত ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
রবিবার এমনই রহস্যজনক ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার শিবপুরের নবীন সেনাপতি লেনের বর্ধিষ্ণুপাড়ায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, নবীন সেনাপতি লেনে ছ’কাঠা জায়গার উপরে দোতলা বড় বাড়িটি সাধারণত তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে। ওই বাড়ি লক্ষ্য করে এ দিন পেট্রল বোমা জাতীয় কিছু ছোড়া হয়েছিল। পরে একটি দেশি বোমাও ছোড়া হয়। কিন্তু সেটি ফাটেনি। এই ঘটনা ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় ওই এলাকায়। স্থানীয় লোকজন ঘুম থেকে উঠে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। পুলিশ জানায়, ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন ওই বাড়ির এক শরিক সব্যসাচী মণ্ডল ও তাঁর এক বন্ধু নীচের ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। আশপাশের লোকের চিৎকারে তাঁরা উঠে দেখেন, ঘরের পাশেই আগুন জ্বলছে।
এ দিন সব্যসাচীবাবু জানান, ওই এলাকায় তাঁদের দু’টি ১২ কাঠার সম্পত্তি আছে। কিন্তু, কেউই ওখানে থাকেন না। সকলেই থাকেন কলকাতায়। বড়বাজারে তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা। তবে সব্যসাচীবাবু মাঝেমধ্যে বর্ধিষ্ণুপাড়ায় আসেন। তাঁর অভিযোগ, অনেক দিন ধরেই তাঁদের পরিবারের কেউ কেউ বাড়িটি ভেঙে প্রোমোটিং করতে চাইছেন। কিন্তু তিনি করতে দিতে নারাজ। সব্যসাচীবাবুর অভিযোগ, ‘‘এ জন্যই পরিবারের কেউ আমাকে খুন করার চেষ্টা করছে। এর আগেও দুষ্কৃতী লাগিয়ে মারধর করে খুনের চেষ্টা হয়েছে। এ বার পেট্রল বোমা মেরে খুনের চেষ্টা হল। কোনও রকমে বেঁচে গিয়েছি।’’
সব্যসাচীবাবুদের এক প্রতিবেশী অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে আমরাই ওই বাড়ির লোকজনকে জানাই। পাশেই বাড়ি হওয়ায় ছাদ থেকে জল ঢেলে আগুন নেভাই।’’ ওই দোতলা বাড়ির বাইরে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে গোটা ঘটনা। সমস্ত ফুটেজ ও বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘কেউ পেট্রল বোমা জাতীয় কিছু ওই বাড়িটির ভিতরে ছুড়ে দেয়। কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে এমন ঘটাল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই পরিবারের তরফে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’