প্রতীকী ছবি।
তেলের দরে রক্ষা নেই। দোসর রান্নার গ্যাস। কলকাতায় আজ ৯৯ টাকা ছাড়িয়ে ‘সেঞ্চুরি’র দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল পেট্রলের দর। অন্য দিকে, সাধারণ মানুষের হেঁশেলে ব্যবহারের সিলিন্ডারের দাম আরও বেড়ে হল ৮৬১ টাকা। এমনিতেই বেলাগাম তেলের দরে বাজারে খাদ্যপণ্য এবং অন্যান্য জিনিসপত্র এখন আগুন। যাতায়াতের খরচও চড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে গৃহস্থের সংসার খরচ বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার, জুলাইয়ের প্রথম দিনে ২৫.৫০ টাকা দামি হয়েছে ১৪.২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার। ফলে কলকাতায় গ্রাহকদের তা কিনতে হবে ৮৬১ টাকা খরচ করে। রাতের দিকে খবর, করোনার সংক্রমণে বিধ্বস্ত আমজনতাকে আরও দুর্ভোগে ফেলার ব্যবস্থা পাকা করে আজ, শুক্রবার ৪০ পয়সা বেড়েছে পেট্রলও। আইওসি-র পাম্পে এক লিটার হয়েছে ৯৯.০৪ টাকা। এ দিন অবশ্য ডিজেলের দাম একই আছে, ৯২.০৩ টাকা। এই নিয়ে ডিসেম্বর থেকে মোট ২৫০.৫০ টাকা বাড়ল রান্নার গ্যাস। আর ওই সময় থেকে পেট্রল ও ডিজেল দামি হল যথাক্রমে ১৫.১৭ এবং ১৬.০৪ টাকা। হোটেল-রেস্তরাঁয় রান্নার ১৯ কেজির বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দামও এ দিন ৮৪.৫০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৬২৯ টাকা।
করোনা সঙ্কটের মধ্যেই নিত্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির এমন বিপুল দর বৃদ্ধি নিয়ে এ দিন মোদী সরকারকে বিঁধেছেন কংগ্রেস, সিপিএম-সহ বিরোধী দলের নেতারা। প্রশ্ন উঠেছে, যে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঢাকঢোল পেটায় কেন্দ্র, তার আওতাভুক্ত গরিব গ্রাহকেরা এত দামে সিলিন্ডার কিনবেন কী করে? তবে অভিযোগ, কোনও সমালোচনাকেই কার্যত আমল দিচ্ছে না সরকার। শুধু গত এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে ১৪.২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১০ টাকা কমেছিল। ঠিক যেমন ভোটের মরসুমেই শুধু সামান্য কমে তেলের দর।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, আরও বড় সমস্যা ‘চুপচাপ’ ভর্তুকিতে কোপ। এখনও বছরে ১২টি ভর্তুকিযোগ্য ১৪.২ কেজির সিলিন্ডার মেলে। সূত্রের দাবি, গত বছর এপ্রিলে কলকাতার গ্রাহক সিলিন্ডার পিছু ১৮৯.৫৭ টাকা ভর্তুকি পেলেও মে মাসে তা ‘উধাও’ হয়। তার পর থেকে ভর্তুকি জমা পড়ছে প্রতি সিলিন্ডার মাত্র ১৯.৫৭ টাকা। অনেক জায়গায় সেটুকুও অমিল। ফলে জুলাইয়ে কী মিলবে স্পষ্ট নয়। প্রতি মাসের শেষ দিনে পরের মাসের গ্যাসের দাম ঘোষণা করাই তেল সংস্থাগুলির দস্তুর। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি নিয়ে কানাঘুষো চললেও সূত্রের খবর, তা ঘোষণা হয় বৃহস্পতিবার ভোরে। যদিও মাসে একাধিক বার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রথমবার রেওয়াজ ভাঙতে দেখা গিয়েছিল গত ডিসেম্বরেই। ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে কয়েক দফায় ২২৫ টাকা বেড়েছিল দর।
জ্বালানির দাম নিয়ে এ দিন ফের মোদী সরকারকে বিঁধেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী, পি চিদম্বরম, সুপ্রিয়া শ্রীনাতে। ২০১৬ সালের অগস্ট (যখন গ্যাস ছিল ৪০০ টাকার কিছু বেশি) থেকে এ মাস পর্যন্ত দরের ঊর্ধ্বমুখী রেখচিত্র দেখিয়ে টুইটে রাহুলের কটাক্ষ, ‘‘মোদী-মায়ার এমনই প্রভাব যে শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতির দর পড়ছে।’’ নভেম্বর থেকে দর বৃদ্ধি উল্লেখ করে চিদম্বরমের টুইট ‘‘মোদী আছেন, তাই সম্ভব।’’ অবিলম্বে এলপিজি-র বর্ধিত দর প্রত্যাহারের দাবি তুলে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, ‘‘আমজনতার জীবনের উপর মোদী সরকারের অপরাধমূলক আক্রমণের কোনও সীমা নেই।’’
সুপ্রিয়ার দাবি, ‘‘সৌদি আরবের অ্যারামকোর এলপিজি-র দামের ভিত্তিতে ভারতে সিলিন্ডারের দর ঠিক হয়। মার্চে সেখানে তা ছিল ৫৮৭ ডলার (প্রতি মেট্রিক টন)। ভারতে তখন ৮১৯ টাকা। এখন সৌদির দর নেমেছে ৫২৩ ডলারে। ডলারের সাপেক্ষে টাকার দরের হিসেবে এ দেশে এলপিজি হওয়া উচিত ৫৫২ টাকা।’’ এত দামে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার ক’জন গ্রাহক সিলিন্ডার কিনতে পারবেন, সে প্রশ্ন তুলে তাঁর দাবি, ইউপিএ সরকার জ্বালানির ভর্তুকি খাতে ১.৪২ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করলেও মোদী সরকার এ বারের বাজেটে তা বিপুল কমিয়েছে।