দুর্ভোগ: জনজাতি সংগঠনের ডাকা অবরোধে থমকে ট্রেন। খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে। (ডান দিকে) দিনভর ট্রেন বন্ধ। হাওড়া স্টেশনে অসহায় অপেক্ষা যাত্রীদের। সোমবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ এবং দীপঙ্কর মজুমদার
একটি জনজাতি সংগঠনের ডাকা রেল অবরোধের জেরে জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। সোমবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধ বেশি রাত পর্যন্ত ওঠেনি।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রয়োজনে অবরোধ মুক্ত করতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। আন্দোলনকারীদের নেতা রবীন টুডু রাতে বলেন, ‘‘রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চলছে। লিখিত প্রতিশ্রুতি পেলেই অবরোধ উঠবে।’’
হাওড়া, খড়গপুর, আদ্রা ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে দিনভর দাঁড়িয়ে কমবেশি ৪০ টি ট্রেন। বেশির ভাগই দূরপাল্লার। চরম দুর্ভোগে শিশু, বয়স্ক ও মহিলা, রোগী-সহ অসংখ্য যাত্রী। রাজ্য প্রশাসন ট্রেনে আটক যাত্রীদের জল ও খাবার জোগানোর ব্যবস্থা করলেও দুর্ভোগের যন্ত্রণা তাতে পুরোপুরি কমেনি। কামরায় জল নেই, এসি, পাখা সব বন্ধ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশে। তাঁর অনুপস্থিতিকালে মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘অবরোধ তুলতে রেল কি কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে? এগুলো সবই বিরোধীদের কাজ। বিজেপি মদত দিচ্ছে, টাকা দিচ্ছে, সিপিএম লোক দিচ্ছে।’’
রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য সব দায় ঠেলে দিয়েছেন রাজ্য সরকারের দিকেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আদিবাসীদের সংগঠন অবরোধ করেছে। তাতে আমাদের কিছু করার নেই। মানুষের দুর্ভোগ হয়েছে। কিন্তু এও ঠিক যে, জঙ্গলমহলের মানুষ রাজ্য সরকারের উপর ক্ষুব্ধ। কারণ সরকার প্রতিশ্রুতি রাখেনি।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গা বাঁচানো ভূমিকা কংগ্রেস এবং সিপিএমেরও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘আদিবাসীদের নিজস্ব দাবি দাওয়া নিয়ে কর্মসূচি। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’’ সিপিএম নেতা তথা আদিবাসী ন্যায় বিচার মঞ্চের সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কের বক্তব্য, ‘‘আদিবাসীদের দাবিগুলি ন্যায় সঙ্গত। তার জন্য আন্দোলনকেও আমরা সমর্থন করি। কিন্তু শিক্ষা সংক্রান্ত দাবিতে রেল রোকো সমর্থন করা যায় না।’’
সকাল থেকেই রীতিমতো টাঙি, বল্লম, তির-ধনুক নিয়ে ধামসা বাজিয়ে লাইনের উপর বসে পড়েন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের সদস্যরা।
স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অলচিকি হরফে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, স্কুলগুলিতে সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষক নিয়োগ ছাড়াও একাধিক দাবিতে এদিন অবরোধ শুরু হয়।
সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ খেমাশুলির কাছে দাঁড়িয়ে পড়ে খড়্গপুরগামী টাটানগর-খড়্গপুর প্যাসেঞ্জার। বেলদা স্টেশনে সকাল সাড়ে ৮টায় আটকে যায় আপ ধৌলি এক্সপ্রেস। খড়্গপুর স্টেশনে একাধিক ট্রেন আটকে যায়।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন খড়্গপুর ডিভিশনের ভদ্রক শাখায় ৪টি মেল এক্সপ্রেস আটকে ছিল ও ৭টি ট্রেন বাতিল হয়। টাটানগর শাখায় ৩টি মেল-এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে যায় ১৮টি ট্রেন বাতিল হয়। হাওড়া-শালিমার শাখায় ৪টি মেল এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে যায় ও ৪০টি ট্রেন বাতিল করতে হয়।
জিআরপি এবং আরপিএফ ঘটনাস্থলে হাজির থাকলেও অবরোধ তুলতে পারেনি। খড়গপুরের মহকুমা শাসক সুদীপ সরকারের নেতৃত্বে অবরোধকারীদের সঙ্গে এদিন খেমাশুলিতে আলোচনা চললেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। সুদীপ বাবু বলেন, “২৮ তারিখের পর সরকারের প্রতিনিধিরা ওঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানানো হয়েছিল। ওঁরা মানতে চাননি।”
আরও পড়ুন: অন্ধকার স্টেশন, আগুন-ভাঙচুর, ভয়ে সিঁটিয়ে রইলেন যাত্রীরা
সংগঠনের মেতা রবীন টুডু অভিযোগ, “আগে অবরোধের বিষয়ে জানানো সত্ত্বেও প্রশাসন তৎপর হয়নি। অপেক্ষা করচতে বলা হয়েছিল।’’
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “পরিষেবা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়েছে। রেল চেষ্টা করলেও জট খোলেনি। স্টেশনগুলিতে ক্যাটারিং সংস্থাকে খাবার এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” রেলের পক্ষ থেকে আটকে পড়া ট্রেনগুলোকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে বলে খবর।
অবরোধের ফলে রেলে নিয়োগের পরীক্ষা যারা দিতে পারছেন না, তাঁদের জন্য ১৬ অক্টোবরের পরে পরীক্ষার দিন ফেলা হবে বলে রেল সূত্রে খবর।