Coromandel Express Accident

অন্ধ্রের খবর শুনতেই করমণ্ডলের সেই ভয়াবহ স্মৃতি তাড়া করছে ওঁদের

গত জুন মাসে ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। দ্রুত গতিতে যাওয়ার সময়ে একটি মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে ট্রেনটি।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৪৪
Share:

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনার দৃশ্য। —ফাইল চিত্র।

চার মাস কেটে গেলেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় আহতদের এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে সেই ভয়াবহ রাতের স্মৃতি! যা এখনও টাটকা তাঁদের মনে। সেই ঘটনার পরে কেউ আতঙ্কে ট্রেনে চড়াই বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ আবার উল্টো পথে হেঁটে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পুজোর ছুটিতে ট্রেনে করেই বেড়িয়ে এসেছেন। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশে ট্রেন দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু নতুন করে আতঙ্ক ফিরিয়ে এনেছে করমণ্ডলের অঘটন থেকে বেঁচে ফেরা যাত্রীদের মনে। বার বার এমন দুর্ঘটনা কেন ঘটবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। কেউ আবার বলছেন, এর পরে আর ট্রেনে উঠবেন কি না, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে।

Advertisement

গত জুন মাসে ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। দ্রুত গতিতে যাওয়ার সময়ে একটি মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে ট্রেনটি। যার জেরে লাইন থেকে ছিটকে পড়েছিল যাত্রী-ভর্তি ওই ট্রেনের কয়েকটি কামরা। কয়েকশো যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছিল। সেই দুর্ঘটনায় আহত হলেও কোনও মতে প্রাণে বেঁচে যান কলকাতার একাধিক যাত্রী। অন্ধ্রের ট্রেন দুর্ঘটনার খবরে তাঁদের সেই আতঙ্ক যেন নতুন করে জ্বলে উঠেছে।

গত জুন মাসে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চড়ে সপরিবার বেড়াতে যাচ্ছিলেন পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার বাসিন্দা, রেলকর্মী শিবলাল কানোজিয়া। ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ার পরে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনও মতে প্রাণে বেঁচে কলকাতায় ফেরেন তিনি। সোমবার শিবলাল বলেন, ‘‘অন্ধ্রের দুর্ঘটনার খবর দেখার পরেই টিভি বন্ধ করে দিই। আমরা স্বামী-স্ত্রী তা-ও দুর্ঘটনার সেই ভয়াবহ স্মৃতি কিছুটা ভুলতে পেরেছি। কিন্তু আমার ছোট দুই মেয়ে এখনও পারেনি। কোনও দুর্ঘটনার খবর শুনলেই ওরা চুপ হয়ে যায়।’’ সে দিনের পরে আতঙ্কিত পরিবারকে এখনও ট্রেনে তুলতে পারেননি বলে জানালেন শিবলাল। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা হলেই দুই মেয়ে জানিয়ে দেয়, তারা ট্রেনে উঠবে না। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর আগে পুরী যাওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু ছোট মেয়ে শুনেই বলল, ও যাবে না। আসলে চোখের সামনে সবটা দেখেছে তো, ভুলতে পারেনি। নতুন করে ট্রেন দুর্ঘটনার কথা শুনলে ওদের আতঙ্ক আরও চেপে ধরবে।’’

Advertisement

ভয়াবহ সেই রাতের স্মৃতি এখনও টাটকা হরিদেবপুরের বাঘা পরিবারেও। স্ত্রীকে নিয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেপে চেন্নাইয়ে মেয়ের কাছে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন চিত্তরঞ্জন বাঘা। গুরুতর আহত হয়েছিলেন স্ত্রী পূর্ণিমা বাঘা। ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসা চলে। এ দিন ফোনে চিত্তরঞ্জন জানালেন, অন্ধ্রের ট্রেন দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকেই তাঁর স্ত্রী বার বার করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সে দিনের দুর্ঘটনার কথা বলছেন। চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘‘ওর আতঙ্ক কাটাতেই আমরা দু’জনে কয়েক দিন আগে ট্রেনে করে মহারাষ্ট্রে গিয়েছিলাম। ঠিকঠাক ভাবে ঘুরেও আসি। ও কিছুটা স্বাভাবিকও হয়েছিল। কিন্তু আবার দুর্ঘটনা সেই আতঙ্ক ফিরিয়ে আনল।’’

অন্ধ্রের ওই রেলপথ দিয়েই এক দিন আগে বিজয়ওয়াড়ায় ফিরেছেন কলকাতার পর্ণশ্রীর বাসিন্দা স্মৃতিলেখা দাস। কর্মসূত্রে থাকেন বিজয়ওয়াড়ায়। তিনিও বালেশ্বরের দুর্ঘটনা থেকে কোনও মতে রক্ষা পেয়েছিলেন। এ দিন স্মৃতিলেখা বললেন, ‘‘এক দিন আগেই আমি কলকাতা থেকে ট্রেনে চেপে ফিরেছি। এক দিন বাদে হলেই হয়তো আবার আমাকে ট্রেন দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হত। হয়তো কপালজোরে এ বার রক্ষা পেলাম। যে পরিমাণ আতঙ্ক কাজ করছে, মনে হয় না আর ট্রেনে চাপতে পারব!’’ কথা শেষ না করেই তিনি বললেন, ‘‘কার ভুলে বার বার দুর্ঘটনা, এটা সামনে আসা উচিত। এতগুলো মানুষের প্রাণ নিয়ে যাঁরা ছেলেখেলা করেন, তাঁদের কড়া শাস্তি হওয়া দরকার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement