শুক্রবার সাত সকালে দিঘার সৈকতে আনাগানো পর্যটকদের। ছবি: শুভেন্দু কামিলা
‘দানা’র দাপট তেমন দেখা গেল না পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্রের গর্জন আর বর্ষণের সাক্ষী রইল সৈকত। আর দুর্যোগ মাথায় করেই পর্যটকেরা ভিড় জমালেন দিঘা, মন্দারমণিতে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ওড়িশার ধামরার কাছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র স্থলভাগে আছড়ে পড়া শুরু হয়। দিঘার সমুদ্রে ঢেউয়ের গর্জন বাড়ে। বাড়তে থাকে হাওয়ার দাপট। বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টিও হয়েছে। রাতভর খাঁ-খাঁ করা সৈকতের ছবিটা শুক্রবার ভোর হতেই বদলে যায়। সাতসকালে ওল্ড থেকে নিউ দিঘা— সৈকত জুড়ে ছিলেন অনেক পর্যটক। ওল্ড দিঘায় ঘাটের কাছে রীতিমতো ভিড়। উত্তাল সমুদ্রের ছবি মোবাইল ক্যামেরায় বন্দির হিড়িক। সমানে চলে নিজস্বী তোলা। সৈকত সরণিতে যাওয়ার মুখে চায়ের দোকানগুলিও ভর্তি ছিল।
ডায়মন্ড হারবার থেকে সপরিবার দিঘায় বেড়াতে আসা প্রদীপ হালদার বললেন, “পুজোর ছুটিতে এসেছিলাম। শনিবার ফিরে যাওয়ার কথা। দুর্যোগে সে ভাবে হোটেলের বাইরে যেতে পারিনি। তাই ছেলে-বউকে এক বার সমুদ্র দেখিয়ে নিয়ে গেলাম।” ঝড়ের সমুদ্রের সাক্ষী থাকবেন বলে ব্যক্তিগত গাড়ি চেপে এ দিন ভোরে দিঘায় এসেছেন, এমন পর্যটকও অনেক।
অথচ জেলা প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী এ দিনও সমুদ্রের ধারে যাওয়া বা হোটেলে ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল। তা উপেক্ষা করে ভিড় জমেছে নিউ দিঘার পুলিশ হলি-ডে হোম, ক্ষণিকা ঘাটে। দিনভর বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের সৈকত থেকে সরিয়েছে পুলিশ। তবে ঝড়-বৃষ্টিতে উপকূলে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শুধু লোডশেডিং হয়েছিল দিঘায়। দুর্যোগের মধ্যে এ দিন পর্যটকেরা ভিড় জমান মন্দারমণি, তাজপুরেও।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “প্রশাসনিক নির্দেশ মেনে প্রায় সব হোটেল থেকেই পর্যটকেরা ফিরে গিয়েছেন। হাতে গোনা কিছু পর্যটক ছিলেন। তাঁদের হোটেলেই নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। কেউ সমুদ্রের ধারে এলে সতর্ক করা হচ্ছে।” দিঘা হোটেল মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তীর আবার দাবি, “যাঁরা বাইরে ঘুরছেন, তাঁরা অনেকে জেলারই নানা প্রান্ত থেকে এসেছেন।”
সকালে জেলাশাসকদের নিয়ে ‘দানা’ পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পরামর্শ, আরও ৪৮ ঘণ্টা সতর্ক থাকতে হবে। পরে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, “দু’দিন পর্যটকদের সৈকতের হোটেলে রাখা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সমুদ্রস্নানও নিষিদ্ধ রয়েছে। আবহাওয়ার অবস্থা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”