টাকা তোলার এবং পুরনো নোট বদলের জন্য ভিড়। শনিবার হাওড়ায় একটি ব্যাঙ্কের সামনে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
লম্বা লাইন এখানেও। গত ৭২ ঘণ্টা ধরে আর পাঁচটা ব্যাঙ্কে যেমন।
পর্যাপ্ত নতুন নোট নেই ব্যাঙ্কের হাতে। তবু ধৈর্য না হারিয়ে ভিড় বলছে, ‘‘এখন টাকা তোলা না গেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু বাড়িতে থাকা পুরনো পাঁচশো-হাজারের নোটগুলো জমা করে নিন।’’
দিকে দিকে ব্যাঙ্কে জড়ো হওয়া গ্রাহকদের সুর এখন দু’টো— ১) নোট দিন। ২) নোট নিন। এ ব্যাঙ্ক কেমন ব্যাঙ্ক, যেখানে প্রথম সুরটি এত ক্ষীণ?
এ হল ‘কলকাতা পুলিশ সমবায় ব্যাঙ্ক’। তিন দিনে যেখানে জমা পড়েছে দু’কোটি টাকারও বেশি। যা স্বাভাবিকের প্রায় সাড়ে তিন গুণ। পরিস্থিতি এমনই যে, ব্যাঙ্কের নিজস্ব চারটি শাখায় কার্যত আর টাকা রাখার জায়গা নেই।
কেন? ব্যাঙ্ক-সূত্রের ব্যাখ্যা, গত ক’দিনে শুধু সদস্যদের বাড়িতে থাকা পাঁচশো-হাজারের নোটেই উপচে পড়ছে ভল্ট। ব্যাঙ্ক পরিচালন সমিতির এক কর্তা জানাচ্ছেন, সাধারণ ভাবে প্রতিদিন গড়ে ২০ লক্ষ টাকার লেনদেন হয় ওই ব্যাঙ্কে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী পুরনো পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিল করা ইস্তক দিনে জমা পড়ছে কমবেশি ৭০ লক্ষ টাকা! এই অবস্থায় কিছু টাকা পাঠানো হয়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের নেতাজি সুভাষ রোড আর উল্টোডাঙা শাখায়। জমা নিলেও টাকা বদলে দিতে পারেনি এসবিআই। তা সত্ত্বেও সেখানেই কিছু টাকা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের কর্মী-অফিসারদের নিয়ে লালবাজারে শুরু হয়েছিল এই সমবায় ব্যাঙ্ক। লালবাজার ছাড়াও খিদিরপুর, উল্টোডাঙা এবং কাশীপুর বিটি লাইনে তিনটি শাখা রয়েছে। চার শাখায় মোট সদস্য ২২ হাজার। অধিকাংশই পুলিশকর্মী।
রাজ্যের সমবায় আইনের ‘আরবান কো-অপারেটিভ’ বিধিতে নথিবদ্ধ এই ব্যাঙ্কে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বা বেসরকারি ব্যাঙ্কের নিয়ম-কানুন, কড়াকড়ি কিঞ্চিৎ কম। মোদীর ঘোষণার পরে স্বাভাবিক ভাবেই পুরনো টাকা জমা দিতে ‘নিজেদের’ ব্যাঙ্কেই লাইন দিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু টাকা জমা নিলেও প্রায় কাউকেই টাকা দিতে পারছে না ওই সমবায় ব্যাঙ্ক। পরিচালন সমিতির এক কর্তা বললেন, ‘‘আমাদের হাতে নতুন নোট নেই। ফলে টাকা কেউ তুলতে পারছেন না।’’ শনিবার অবশ্য সামান্য কিছু টাকা তোলার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু ওই কর্তাই জানালেন, টাকা তোলার তেমন আগ্রহ নেই। নগদ দিতে না পারলেও অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক দিতে রাজি সমবায়। কিন্তু গ্রাহকরা তা নিয়েও জোর করছেন না। বরং তাঁরা চান, সমবায় ব্যাঙ্ক তাঁদের কাছে থাকা টাকাটা দ্রুত জমা নিয়ে নিক।
সমবায় পরিচালন সমিতির এক সদস্য জানান, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নিতে হবে। প্রথমে রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কও টাকা দিতে পারেনি। শুক্রবার কোনও রকমে পাঁচ লক্ষ টাকার নতুন নোট মেলে। শনিবার মেলে ২০ লক্ষ টাকা। এমনিতে এই টাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পারার কথা নয়। কিন্তু গ্রাহকরা সবাই সহযোগিতার মেজাজে। সমবায় ব্যাঙ্কের সচিব মন্টু বৈরাগীর কথায়, ‘‘সমস্যা হচ্ছে। ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হবে। সদস্যরা যথেষ্ট সাহায্য করছেন। টাকা তোলার ব্যাপারে চাপ দিচ্ছেন না তাঁরা।’’
এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘পুলিশ সমবায়ে টাকা জমা দেওয়ার ভিড় বলে আবার অন্য কিছু ভাববেন না! প্রতি বছর পুলিশকর্মীদের সম্পত্তির বিবরণ জমা দিতে হয়। সুতরাং সবই স্বচ্ছ।’’
হঠাৎ এত টাকা জমার হিড়িক কেন? ওই কর্তার রসিকতা, ‘‘পুলিশের পরিবারে কি সঞ্চয়ী মহিলা থাকতে নেই? আমাদের মেয়ে-বৌরা কষ্ট করে যা জমিয়ে রেখেছে, সে সবই জমা পড়ছে। পুলিশের তো বেতনটুকুই ভরসা!’’