Cyclone Remal

রেমালও কি ভিটে কাড়বে ফের? আতঙ্ক ঘোড়ামারায়

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপের বাসিন্দাদের রবিবার সকাল থেকে ওই দ্বীপের মিলন বিদ্যাপীঠের পাশের ফ্লাড শেল্টারে নিয়ে যাওয়া শুরু করে প্রশাসন।

Advertisement

সমরেশ মণ্ডল

সাগর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৪ ০৮:৪১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

তখন ঝোড়ো হাওয়া প্রবল। বাড়ছে বৃষ্টির বেগ। আর ঘরে থাকতে সাহস করেননি কবিতা দোলুই। তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ গুছিয়ে ফ্লাড শেল্টারের পথ ধরলেন। হাতে ধরা প্লাস্টিক প্যাকেটে আধার, ভোটার ও রেশন কার্ড। চোখ-মুখে আতঙ্ক। যদি এ বার রেমালও ঘর কাড়ে!

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপের বাসিন্দাদের রবিবার সকাল থেকে ওই দ্বীপের মিলন বিদ্যাপীঠের পাশের ফ্লাড শেল্টারে নিয়ে যাওয়া শুরু করে প্রশাসন। বিকেলের মধ্যে অধিকাংশই সেখানে গিয়ে ওঠেন। মহিলা ও শিশুদেরই সেখানে বেশি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই দলে ছিলেন কবিতাও। তাঁদেরই কয়েক জন জানালেন, ইয়াসের স্মৃতি এখনও তাঁদের মনে দগদগে ক্ষতের মতো রয়ে গিয়েছে।

অবশ্য শুধু ইয়াস নয়, আয়লা, আমপানেও রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল এই দ্বীপ। কবিতা বলছিলেন, “প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায়। সরকারেরও কিছু করার নেই। এ বারও যদি ইয়াসের মতো পুরো দ্বীপ ডুবে যায়, তখন ভিটেমাটি কিছুই থাকবে না।”

Advertisement

মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘোড়ামারা দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে নদী ও সমুদ্র। এক দিকে বটতলা, মুড়িগঙ্গা ও হুগলি নদী। অন্য দিকে বঙ্গোপসাগর। ঘোড়ামারার একটি অংশ লোহাচরা। সেটি তলিয়ে গিয়েছে আগেই। খাসিমারাও অনেকটা ছোট হয়ে গিয়েছে ভাঙনের জেরে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাসে ছোট হয়ে আসছে পাত্রপাড়া, গিরিপাড়া, মাইতিপাড়া, চুনপুরীর মতো গ্রামগুলির পরিধি। ভেসে যাচ্ছে বাড়িঘর, খেত-খামার। সরকারি তথ্য বলছে, লোকসংখ্যাও কমে গিয়েছে আগের থেকে। বর্তমানে ১১২৫টি পরিবার বাস করে ওই দ্বীপে। হাজার তিনেক ভোটার।

চুনপুরী পূর্বপাড়া, হাটখোলা দক্ষিণ, মন্দিরতলা ও পাত্রপাড়ার নদীবাঁধ দুর্বল। রাত পর্যন্ত কোথাও বাঁধ না ভাঙলেও বাঁধ উপচে জল ঢুকেছে।

প্রতি বার দুর্যোগ এলে ভিটেমাটি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হওয়ায় তিতিবিরক্ত মানুষ জন। গত কয়েক বার ঝড়ের আগে ঘোড়ামারার বাসিন্দাদের সাগরদ্বীপের বামনখালি ফ্লাড শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ বার ওই দ্বীপেই ফ্লাড শেল্টার তৈরি হয়েছে। বাসিন্দারা অনেকেই দ্বীপ ছাড়তে রাজি হন না বলে প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য।

স্থানীয় বাসিন্দা শুকদেব দাসের কথায়, “গ্রামের বাইরে ফ্লাড শেল্টারে গিয়ে দেখেছি, ফিরে এসে বাড়িঘরের জিনিসপত্র আর খুঁজে পাওয়া যায় না। সব লুট হয়ে যায়। প্রতি বার ঝড় এলে যখন বাড়ি ছাড়তেই হবে, তখন গ্রামের কোথাও আশ্রয় নেওয়াই ভাল। আবহাওয়া একটু ভাল থাকলে অন্তত দিনে এক বার ভিটেটা নিজের চোখে দেখে তো যেতে পারব।”

ফ্লাড শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া একাদশী বর্মণ বলেন, “আগে হাটখোলা গ্রামে বাড়ি ছিল। এখন ওই গ্রামের উঁচু জায়গায় ত্রিপল টাঙিয়ে সপরিবারে বসবাস করি। এ বারও আতঙ্কে আছি।” চুনপুরীর সোনালি দাস কয়াল তিন মাসের সন্তানকে নিয়ে ফ্লাড শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাচ্চা নিয়ে কাঁচা বাড়িতে থাকলে বিপদ এই দুর্যোগে। তাই নিরাপদ জায়গায় চলে এসেছি।”

ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সঞ্জীব সাগর বলেন, “ছোট দ্বীপে বিপদ লেগেই থাকে। দুর্যোগের খবর পেয়ে প্রায় এক হাজার বাসিন্দার ফ্লাড শেল্টার, স্কুলঘরে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছি।” বিডিও কানাইয়া কুমার রায় জানান, ঘোড়ামারার অধিকাংশ বাসিন্দা নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের খাবার, পানীয় জল, ওষুধ, আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে তাঁদের সাগরে সরিয়ে আনা হবে। এই দ্বীপে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ঝড়ের জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement