জনধনে টাকা রাখায় শীর্ষে বাংলা, কেন্দ্রের তথ্যে চক্রান্ত দেখছে তৃণমূল

নোট বাতিল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার মোদী-বিরোধিতার মধ্যেই কেন্দ্র জানিয়ে দিল, নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকে জনধন প্রকল্পে বিপুল অর্থ জমা পড়েছে এবং এই তালিকার শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২৮
Share:

নোট বাতিল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার মোদী-বিরোধিতার মধ্যেই কেন্দ্র জানিয়ে দিল, নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকে জনধন প্রকল্পে বিপুল অর্থ জমা পড়েছে এবং এই তালিকার শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ।

Advertisement

কেন্দ্রের এই তথ্য প্রকাশের পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত দেখছে তৃণমূল। তাদের দাবি, কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে একাধিক প্রকল্পের টাকা জনধন অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। ফলে কেন্দ্র পুরো তথ্য প্রকাশ না করলে মানুষ বিভ্রান্ত হবেন। অন্য দিকে বিরোধী বাম, কংগ্রেস ও বিজেপির একাংশের অভিযোগ, শাসক তৃণমূলের কিছু নেতার হাতে থাকা সারদা-সহ বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার ‘কালো টাকা’ জনধন প্রকল্পকে ব্যবহার করে সাদা করার চেষ্টা হচ্ছে।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে সকলকে ব্যাঙ্কের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে জনধন অ্যাকাউন্ট চালু করে কেন্দ্র। এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত প্রায় ২৪ কোটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। শূন্য ব্যালান্সের এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মূলত দারিদ্রসীমার নীচের লোকেদের বিভিন্ন সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়। এই অ্যাকাউন্টে এক আর্থিক বছরে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জমা থাকতে পারে। এবং এককালীন সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা তোলা যায়। নোট বাতিলের ঘোষণার পরে অর্থ মন্ত্রক নানা সূত্রে জানতে পারে, অন্যের জনধন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা পড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের গোপন ক্যামেরাতেও ধরা পড়েছে, এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা জমা দেওয়া হচ্ছে এবং বহু ক্ষেত্রে ওই অ্যাকাউন্টের প্রকৃত মালিক তা টেরও পাচ্ছেন না! তখনই মন্ত্রকের একটি সূত্র অভিযোগ তোলে, এই অ্যাকাউন্টকে ব্যবহার করে এ ভাবেই কালো টাকাকে সাদা করার চেষ্টা চলছে। অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রে আজ বলা হয়, নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গোটা দেশে জনধন খাতে জমা পড়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা জমা পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তালিকায় দ্বিতীয় নামটি কর্নাটক। অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, আয়কর দফতর এই অ্যাকাউন্টগুলির উপর কড়া নজরদারি শুরু করেছে।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রকের থেকে খবর পাওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রীও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, অন্যের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা হলে কেন্দ্র ছেড়ে দেবে না। যে হেতু এই অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা করার অনুমতি আছে, তাই অনেকে ৪৯ হাজার টাকা জমা করছেন। এ ভাবে আইনের হাত এড়ানোর চেষ্টাও কেন্দ্র নজরে রাখছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, এ সব করতে গিয়ে ধরা পড়লে পুরো টাকাই বাজেয়াপ্ত করা হবে। পাশাপাশি বেনামি সম্পত্তি আইনের আওতায় সাত বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে।

কেন্দ্রের এই তথ্য প্রকাশকে ‘চক্রান্ত’ বলার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করতে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে দিল্লি থেকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রীর মতো রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ জনধন খাতে দেওয়া হয়। ই-গভর্নেন্স, ই-পেমেন্ট চালু হওয়ার সুবাদে এই সব খাতে এমনিতেই টাকা দেওয়া হয়। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, সব রাজ্যেই জনধন খাতে টাকা জমা পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গকে আলাদা করে দেখানো ঠিক নয়। কোন খাতে কীসের টাকা জমা পড়েছে, তা জেনে বলা উচিত কেন্দ্রের। কারণ, ব্যাঙ্ক কেন্দ্রের অধীনে। তার পরেও কোনও অনিয়ম হলে রাজ্য তদন্ত করে দেখতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গে জনধন অ্যাকাউন্টকে ‘অন্য কাজে’ ব্যবহার করা হতে পারে বলে গত কয়েক দিন ধরেই আশঙ্কা করছিলেন বিরোধী বাম, কংগ্রেস বিজেপির কিছু নেতা। এ দিন সিপিএমের এক নেতা জানান, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ রাখছেন। গ্রামাঞ্চলে অনেক গরিব মানুষ এ ভাবে নিজেদের জনধন অ্যাকাউন্টে অন্যের টাকা রাখছেন। আয়কর বা জেল-জরিমানার মতো সমস্যায় না পড়লেও অ্যাকাউন্টে ওই পরিমাণ টাকা রাখায় বিপিএলের সুযোগ-সুবিধা থেকে আগামী দিনে বঞ্চিত হতে পারেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement