টাকার খেলায় পাসপোর্ট বাংলাদেশিদের হাতে

লুকিয়েচুরিয়ে জালিয়াতদের ধরে জাল পাসপোর্ট জোগাড়ের দরকার নেই। কেননা সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে রীতিমতো বুক বাজিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে আসল ভারতীয় পাসপোর্টই তো পেয়ে যাচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি!

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০৩:৪৩
Share:

প্রতীকীছবি।

লুকিয়েচুরিয়ে জালিয়াতদের ধরে জাল পাসপোর্ট জোগাড়ের দরকার নেই। কেননা সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে রীতিমতো বুক বাজিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে আসল ভারতীয় পাসপোর্টই তো পেয়ে যাচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি!

Advertisement

সম্প্রতি কলকাতা বিমানবন্দরে এমন দু’জন যাত্রী ধরা পড়েছেন, যাঁরা আদতে বাংলাদেশি অথচ তাঁদের সঙ্গে যে-পাসপোর্ট রয়েছে, তা ভারতীয়। সেখানে নামটিও বদল করা হয়েছে। নড়াইলের অমৃত খানের পাসপোর্টে নিজের ছবি থাকলেও নাম বারাসতের পিন্টু দাসের। দোহা যাওয়ার পথে ধরা পড়েন তিনি। তাঁকে জেরা করে জানা যায়, হাফিজুল মেহেদি নামে এক ব্যক্তি পিন্টু দাসের নামে নথি জোগাড় করে দেওয়ার পরে পাসপোর্টের আবেদন করেন অমৃত। ই এম বাইপাসের ধারে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ইন্টারভিউ দেন। বারাসতে পৌঁছে যায় পাসপোর্ট।

চট্টগ্রামের রসিদুল আজাদ ধরা পড়েছেন চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় আসার পরে। চার বছর আগে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে ক্যানিং থেকে তিনি নথি জোগাড় করেন মোসলেম ঘরামির নামে। তিনিও ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দোহা চলে যান। সেখান থেকে সম্প্রতি নিজের ‘দেশ’ চট্টগ্রাম ঘুরে আবার আসেন কলকাতায়।

Advertisement

আসল পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও ওই সব লোককে ধরা হচ্ছে কী ভাবে? বিমানবন্দরের অভিবাসন অফিসারেরা জানাচ্ছেন, প্রতিবেশী দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে ভাষা ও চেহারায় কিছু অমিল থেকেই যায়। তা ছাড়া এই ধরনের যাত্রীরা অনেক সময়ে রীতিমতো ঘাবড়ে থাকেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে (রসিদুলের মতো ঘটনায়) ধোঁকাও খেয়ে যান তাঁরা।

ভারতীয় পাসপোর্ট পেতে মূলত দু’টি নথি জরুরি— ঠিকানা এবং জন্ম-তারিখের শংসাপত্র। অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে এসে অমৃত এবং রসিদুল টাকার বিনিময়ে ওই দু’টি শংসাপত্র জোগাড় করেন। জন্ম-তারিখের ক্ষেত্রে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড বা আদালতের হলফনামা এবং ঠিকানার জন্য ভোটার বা আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই গ্রহণ করা হয়। পুলিশি সূত্রের খবর, টাকার বিনিময়ে সহজেই সেই সব নথি বার করে আসল পাসপোর্ট বার করে নিচ্ছেন রসিদুল-অমৃতেরা।

পূর্ব ভারতের রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার বিভূতি কুমার বলেন, ‘‘পাসপোর্ট আবেদনকারীর সম্পর্কে পুলিশ তদন্ত করে সন্তুষ্ট হলে তবেই পাসপোর্ট দেওয়া হয়। ফলে নথি জাল কি না, তা দেখার কথা পুলিশেরই।’’ অমৃত ও রসিদুল পাসপোর্ট পেয়েছেন ক্যানিং ও বারাসত থেকে। নতুন বারুইপুর জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ জানান, আবেদনকারীর বাড়ির চার পাশের লোকজনকে দস্তুরমতো শিখিয়ে-পড়িয়ে রাখা হয়। সেই সব পড়শির বক্তব্য শুনেও বোঝার উপায় থাকে না যে, লোকটি আদতে বাংলাদেশি। ভোটার কার্ড বা আবেদনকারীর অন্যান্য নথিপত্র যদি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হয়, তা হলে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়া সম্ভব নয়।

অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের একাংশের যোগসাজশ থাকে বলেও অভিযোগ উঠেছে। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, এর আগেও বারাসতের ভুয়ো ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট বার করা হয়েছে। এ-সব ক্ষেত্রে পুলিশের যোগসাজশ নিয়ে তদন্ত চলছে। কয়েক জন পুলিশ অফিসারকে চিহ্নিত করে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement