প্রতীকী ছবি।
মিশ্র পদ্ধতিতেত (ব্লেন্ডেড মোড) পঠনপাঠনের বিষয়ে খসড়া তৈরি করার পরে এর সঙ্গে যুক্ত সকলের মতামত চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তারা জানিয়েছে, উচ্চশিক্ষায় ৪০ শতাংশ পড়াশোনা হোক অনলাইনে। বাকি ৬০ শতাংশ অফলাইনে। পরীক্ষা নেওয়া হোক পুরোটাই অফলাইনে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, পরিকাঠামো ও সুযোগসুবিধা তৈরি না-করে এই পদ্ধতিতে চালু করলে পড়ুয়াদের মধ্যে আর্থ-সামাজিক বিভাজন বাড়বে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস শনিবার বলেন, "এই পদ্ধতিতে পড়াশোনার ক্ষেত্রে আগে পারিপার্শ্বিক অবস্থা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সঙ্গে এই পদ্ধতি চালু করতে পারবে তা মনে হয় না। আগে নিশ্চিত করতে হবে পড়ুয়াদের কাছে দ্রুতগামী ইন্টারনেট পরিষেবা এবং স্মার্টফোন অথবা ল্যাপটপ রয়েছে কিনা। কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি পড়ুয়া এই সুযোগ পাওয়ার পরেই সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এই মিশ্র পদ্ধতি চালু করা সম্ভব। তা না-হলে এতে আর্থ-সামাজিক বিভাজন বাড়বে।" প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের এবং আর্থিক দিক থেকে অসঙ্গতি সম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য দ্রুতগামী ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের ব্যবস্থা করেছে।।
পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুটা) সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্ত মিশ্র পাঠ নিয়ে ইউজিসির উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁর মতে, অনলাইন পঠনপাঠন কোনওভাবেই বিকল্প পদ্ধতি পাঠ পদ্ধতি হতে পারে না। ভারতের মতো একটি দেশে শিক্ষার প্রসারে এই পদ্ধতি বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সভাপতি পার্থিব বসুরও বক্তব্য, অনলাইন পঠনপাঠন কখনই অফলাইন পঠনপাঠনের বিকল্প হতে পারে না। অনলাইনে স্টাডি মেটেরিয়াল পাঠানো বা কিছুটা আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু এই ভাবে ধরাবাঁধা অনলাইনে পঠনপাঠন এ দেশের নিরিখে বাস্তব নয়।
সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস সরকার বলেন, "আর্থ–সামাজিক পরিস্থিতিকে অস্বীকার করে এভাবে পঠনপাঠন চালু করলে সেটা চাপিয়ে দেওয়া হবে। উচ্চশিক্ষায় ড্রপ আউট বাড়বে।" তাঁর ব্যাখ্যা, ভারত সরকারের তথ্যই বলছে, দেশের ১০.৭ শতাংশের কাছে কম্পিউটার-সহ অন্যান্য যন্ত্র রয়েছে। আর ২৩.৮ শতাংশের কাছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। তার মানে এর বাইরে থাকা পড়ুয়ারা গোড়া থেকেই মিশ্র পদ্ধতির পঠনপাঠন থেকে বাদ পড়বে।