প্রতীকী ছবি।
দুর্গা কেন অস্ত্রহীন, সে প্রশ্ন তুলে একটি বারোয়ারি দুর্গাপুজো ‘বয়কট’ করার ডাক সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছিলেন আরএসএসের প্রচারক। পুজোর ক’দিন সেই মণ্ডপে ভিড় অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছে, বয়কটের ডাক মানুষকে প্রভাবিত করতে পারেনি।
এই ঘটনা বীরভূমের সদর শহর সিউড়ির। সূত্রের খবর, শহরের অন্যতম বড় ক্লাব চৌরঙ্গী-র পুজোর থিম নিয়ে প্রশ্ন তুলে জেলা সদরে সঙ্ঘের প্রচারকের দায়িত্ব থাকা এক জন তাঁর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেছিলেন, ‘শাস্ত্র না মেনে কেন অস্ত্ররহিত দুর্গা। বয়কট করুন।’ একই বার্তা আদানপ্রদান হয়েছে বীরভূমের সঙ্ঘ সদস্যদের নিজেদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও। সঙ্ঘের এমন অবস্থানে সমর্থন ছিল বিজেপি নেতাদের একাংশের। অন্য দিকে, ওই পুজোর উদ্যোক্তাদের কটাক্ষ, অগণিত মানুষ ভিড় করে রাতভর পুজো দেখে এই ‘অপপ্রচারের’ সমুচিত জবাব দিয়েছেন। এমনকি জেলা বিজেপি সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলও ঠাকুর দর্শন করে গিয়েছেন বলে উদ্যোক্তাদের দাবি।
সর্বধর্ম সমন্বয় এবং সম্প্রীতির বার্তাই ছিল এ বার চৌরঙ্গী ক্লাবের ৪০ তম বর্ষের পুজোর থিম। উদ্যোক্তাদের কথায়, ‘‘মণ্ডপের বাইরে রামধনুর সাতটি রংকে সাত ধর্মের সহবস্থান হিসাবে বোঝানো হয়েছে। সেই সাতটি রং ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করছে কালো মেঘ। সেই অশুভ শক্তিকে নাশ করছেন দেবী দুর্গা। তবে সেটা অস্ত্র হাতে নয়। বরং সব অস্ত্র সর্বশক্তিমান সূর্যের সামনে রাখা একটি অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে।’’
কিন্তু সেই থিমেই আপত্তি আরএসএসের। সংগঠনের বীরভূম জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবাজী মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমরা জানি, দেবী দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী। অস্ত্র হাতেই দেবী অসুররূপী অশুভ শক্তি নাশ করেছিলেন। অস্ত্র ছাড়া দুর্গা ভাবাই যায় না! কেন শাস্ত্র বিকৃতি হবে? তাই সচেতন ভাবেই ওই পুজোর বিরুদ্ধে আমরা সরব ছিলাম সোশ্যাল মিডিয়ায়।’’
চৌরঙ্গীর ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ দেবাশিস ধীবর বলেন, ‘‘সম্প্রীতি বজায় থাক, এটা যাঁরা চান না, এমন প্রচার তাঁরাই করতে পারেন। নজরে এলেও তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার আমাদের বা দর্শনার্থীদের প্রভাবিত করেনি। হাজার হাজার মানুষ রাত তিনটে পর্যন্তও প্রতিমা দর্শন করেছেন। ভাবনার তারিফ করেছেন।’’ ঘটনাচক্রে এই ক্লাবের সভাপতি সিউড়ির পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। শাসকদলের আরও কিছু নেতা জড়িয়ে রয়েছেন। সে জন্যই কি এমন প্রচার? জেলা বিজেপি নেতাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, ‘‘আরএসএস অস্ত্র ছাড়া দুর্গা হলেই আপত্তি তোলে। তাতে সহমত থাকে আমাদের। এখানে রাজনীতি খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন।’’
উজ্জ্বলবাবুর মন্তব্য, ‘‘রাজনীতি কিনা জানি না, আসলে দোষ ওঁদের মানসিকতার। তাই এমনটা করেছেন।’’ এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া এড়িয়েছেন জেলা বিজেপি সভাপতি।