জমা জল নামছে কই, ক্ষোভ দুর্গতদের

কোথাও তুমুল বৃষ্টিতে দুর্গতদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে। কোথাও আবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হলেও হাসি ফোটেনি গ্রামবাসীদের। কারণ, জমা জল নামছে না। হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলাতেই জলবন্দি মানুষদের দুর্ভোগ কমল না বৃহস্পতিবারও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০১:২২
Share:

আরামবাগের আরান্ডি থেকে জয়সিংহচক যাওয়ার রাস্তার উপর দিয়ে বইছে জল। ছবি: মোহন দাস।

কোথাও তুমুল বৃষ্টিতে দুর্গতদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে।

Advertisement

কোথাও আবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হলেও হাসি ফোটেনি গ্রামবাসীদের। কারণ, জমা জল নামছে না।

হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলাতেই জলবন্দি মানুষদের দুর্ভোগ কমল না বৃহস্পতিবারও। জমা জল কবে নামবে, সেই দুশ্চিন্তাতেই গ্রামবাসীদের ঘুম উবেছে। হুগলির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আরামবাগ মহকুমা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে না হলেও সন্ধ্যার পর এখানে বৃষ্টি নামে। খানাকুলের দু’টি ব্লক, আরামবাগ এবং পুড়শুড়া ব্লক এলাকা এখনও জলমগ্ন। বর্ধমানের বিভিন্ন খাল থেকে গড়িয়ে আসা জলও জমা হচ্ছে এ সব এলাকায়। আরামবাগের মুথাডাঙ্গা থেকে বর্ধমান যাওয়ার রাস্তায় তেলুয়া-ভালিয়া এলাকায় কোমরসমান জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় বাস চলাচল বন্ধ। মায়াপুরের রাস্তাতেও এক হাঁটু জল। সেখানে অবশ্য যান চলাচল বন্ধ হয়নি। আরামবাগ থেকে খানাকুলের গড়েরঘাট রাস্তার জগদীশতলাও জলের তলায়।

Advertisement

জলমগ্ন বাগনান। ছবি: সুব্রত জানা।

এই সব এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, অতীতে যত বন্যাই হোক, জল দিন তিনেকেই নেমে যেত। এখন রাস্তার ধারের নয়ানজুলি বুজিয়ে বেআইনি নির্মাণের জন্যই জল নামতে পারছে না। নেই সরকারি নজরদারিও।

পুড়শুড়ার মোট ৮টি পঞ্চায়েত এলাকার সব ক’টিই জলমগ্ন। দু’টি ত্রাণ শিবিরে ২৫০ জনকে রাখা হয়েছে। আরামবাগ ব্লকে ৬টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ৩০০ জন। খানাকুল-২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের ৬৮টি গ্রামই জলমগ্ন হয়েছে। গ্রামবাসীরা নৌকায় যাতায়াত করছেন। ব্লকে ৩টি ত্রাণ শিবিরে ১০৬টি পরিবারকে স্থানান্তরি করানো হয়েছে। দুর্গতদের মধ্যে খানাকুল-২ ব্লকের পানশিউলি গ্রামের শম্ভুনাথ মালিক এবং মাড়োখানা গ্রামের বিভাস দলুইয়ের ক্ষোভ, ‘‘ত্রিপল পাচ্ছি না। গরুর খড় পচে গেল। ঘাসও মিলছে না। এত জল। কবে নামবে কে জানে?’’

আরামবাগ-তারকেশ্বর রাস্তা। মায়াপুরে মোহন দাসের তোলা ছবি।

খানাকুল-১ ব্লকের মোট ১৩টি পঞ্চায়েত এলাকার কোথাও মাটি জেগে না থাকলেও কোনও ত্রাণ শিবির হয়নি। কিছু পরিবার নিজেরাই গ্রামের উঁচু জায়গায় গবাদি পশু-সহ আশ্রয় নিয়েছেন। ব্লকে অবশ্য ত্রিপল-সহ ত্রাণের দাবিতে ক্ষোভ রয়েছে। ত্রিপলের চাহিদার কথা মেনে নিয়ে বিডিও গোবিন্দ হালদার জানান, জেলা প্রশাসনের কাছে আরও ত্রিপল চাওয়া হয়েছে।

একই ছবি, জেলার অন্য কিছু ব্লকেও। ডিভিসি-র ছাড়া জল এবং কানা নদী উপচে ধনেখালির বিস্তীর্ণ এলাকা এবং পোলবা-দাদপুরের সোমসারা, আয়মা, মাখালপুর প্রভৃতি জায়গা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্কুলে খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির। জাঙ্গিপাড়ায় ডাকাতিয়া খালের জলে দিলাকাশ, রাজহলহাট, রসিদপুর এবং মুণ্ডলিকার বেশ কিছু এলাকায় জল জমেছে। একই ছবি তারকেশ্বরের ১০টি পঞ্চায়েত এলাকা এবং ১৩টি ওয়ার্ডে।

গ্রামীণ হাওড়ায় এ দিন সকাল থেকেই তুমুল বৃষ্টি হয়েছে। আমতার রসপুর পঞ্চায়েতের জমা জল বেরিয়ে যায় সোমেশ্বর জোড়াপুলের কাছে দামোদরের বাঁধের স্লুইস গেট দিয়ে। দামোদর খালি থাকলে তবেই এ ভাবে জল নিকাশি সম্ভব। এ বারে বাসিন্দারা পড়েছেন জোড়া আক্রমণের মুখে। একদিকেটানা বৃষ্টি, অন্যদিকে ডিভিসি পর্যায়ক্রমে জল ছাড়তে থাকায় দামোদরও প্রায় পূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে স্লুইস গেট খুললে বরং দামোদরের জল গ্রামে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অগত্যা এক কোমর জল পেরিয়ে যাতায়াত করা ছাড়া আর কোনও উপায় দেখতে পাচ্ছেন না এই পঞ্চায়েতের অধীন দঁকি, রসপুর, কুমারিয়া, পুটখালি প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারা। বহু মাটির এবং ছিটেবেড়া দেওয়া বাড়ি আংশিক বা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। দফারফা রয়েছে চাষের। উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে বলেন, ‘‘অবিলম্বে ৫০০ ত্রিপল চাই। পেয়েছি মাত্র ১০০। সাড়ে চার কুইন্টাল চাল পেয়েছি। লাগবে ১০ কুইন্টাল। কী যে করব বুঝতে পারছি না।’’

উদয়নারায়ণপুর, বাগনান, উলুবেড়িয়ার জলমগ্ন এলাকাগুলিতেও জল না নামায় ক্ষোভ রয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, পাঁচলার চড়া পাঁচলা এলাকায় বিধ্বংসী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ২০০। এর মধ্যে ৮৫টি চরম ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের হাঁড়ি, কড়াই, স্টোভের বিশেষ কিট দেওয়া হয়েছে। তিনটি ত্রাণ শিবিরে তিনটি লঙ্গরখানায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। ত্রিপল নিয়ে দুর্গতদের ক্ষোভ কমেনি। তাঁরা পরিবারপিছু দু’টি করে ত্রিপলের দাবি তুলেছেন। ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলছে। তা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে। এ দিন শ্যামপুরের বেলপুকুরে খালের পাড়ের ৬টি দোকান এ দিন ভেঙে পড়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement