যাত্রীদের কাছ যেমন খুশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ। ছবি- পিটিআই।
পুরনো ভাড়াতেই পথে নামানো হবে বাস-মিনিবাস। মালিকদের সংগঠনগুলোর তরফে এমনটাই জানানো হয়েছিল। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল একেবারে অন্য চিত্র। বৃহস্পতিবার যে সমস্ত বাস-মিনিবাস পথে নেমেছে, যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে যেমন খুশি ভাড়া। কোনও রুটে বাসে পা দিলেই দিতে হয়েছে ১০ টাকা, কোথাও আবার ১৫ বা ২০। সরকারি নির্দেশ ছাড়া এ ভাবে বেশি ভাড়া নেওয়া যায় কি? কনডাক্টরদের জবাব: যত আসন, তত যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে হলে যাত্রীদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। আর মালিকদের সংগঠনগুলোর দাবি, তারা পুরনো ভাড়াই নিতে বলেছে। এর পরেও যদি কেউ বেশি ভাড়া নিয়ে থাকে, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বুধবারের বৈঠকের পরেই বাসমালিকদের সংগঠনগুলো জানিয়ে দিয়েছিল, আজ বৃহস্পতিবার থেকেই শহর ও শহরতলির রাস্তায় নামবে বাস। সেই মতো এ দিন সকাল থেকেই রাস্তায় বাস-মিনিবাসনামতে দেখা যায়। যাত্রীদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, বাসে পা দিলেই ভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। উত্তর কলকাতা থেকে দক্ষিণ কলকাতা, হাওড়া থেকে সল্টলেক— অধিকাংশ বাস-মিনিবাসের কনডাক্টরই এ দিন যেমন খুশি ভাড়া হাঁকিয়েছেন।
২৩০ নম্বর রুটের একটি বাসে এ দিন আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে উঠেছিলেন শান্তনু মজুমদার। তাঁর অভিযোগ, “গত কয়েক দিন ধরে বাসের জন্য হাপিত্যেস করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। বেসরকারি বাস পথে নামতে কিছুটা সুবিধা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সাত টাকার বদলে এ দিন ১৫ টাকা নিয়েছেন কনডাক্টর।” একই অভিজ্ঞতা বিএনআর-বাঙ্গুরগামী ২২৭ নম্বর রুটের যাত্রী নীলাভ্র সান্যালের। তিনি বলেন, “আমার কাছ থেকে ১০ টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভাড়া বেশি নিলেও নতুন ভাড়ার কোনও টিকিট দেওয়া হয়নি। উল্টে কনডাক্টর বলছেন, আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
অধিকাংশ বাস-মিনিবাসের কনডাক্টরই এ দিন যেমন খুশি ভাড়া হাঁকিয়েছেন। ছবি- পিটিআই।
একই রকম অভিজ্ঞতা ২২৭, ২৩৪, কেবি ১৬, ৭৯বি, ৯৩ এবং ২২২ নম্বর রুটের বাস যাত্রীদেরও। বেলঘরিয়া থেকে গল্ফ গ্রিন, হাতিয়ারা থেকে সেক্টর ফাইভগামী বহু রুটেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গড়িয়া-বারাসত, ধর্মতলা-বারাসত, সাঁতরাগাছি-সল্টলেকগামী বাসে আরও বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। বারাসাত-সাঁতরাগাছি রুটের এক যাত্রীর অভিজ্ঞতা, তাঁকে ১৮ টাকার পরিবর্তে এ দিন ভাড়া দিতে হয়েছে ৩০ টাকা। আরও এক যাত্রী জানান, তাঁর কাছ থেকে ১২ টাকার বদলে ১৪ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আবার কেষ্টপুর থেকে হাডকো মোড় পর্যন্ত ১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। হাওড়া ময়দান থেকে শিয়ালদহ রুটের বাসে নেওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ ভাড়া। মিনিবাসগুলোতেও ২০ টাকা ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠছে।
আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যুহার কমানোই এখন নিশানা করছে রাজ্য সরকার
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের তরফে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বেশি ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি মেনে নেন। তিনি বলেন, “আমারা পুরনো ভাড়াতেই বাস নামানো হবে বলে জানিয়েছিলাম। ভাড়া বাড়ানোর বিষয় রেগুলেটরি কমিটির উপরে ছাড়া হয়েছে। তার পরেও বেশ কয়েকটি রুটে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যাঁরা এমন করছেন, তাঁদের বেশি ভাড়া নিতে বারণ করা হয়েছে।”
আরও পড়ুন: মেলেনি সাহায্য, নারী পাচারের শঙ্কা বাড়াচ্ছে আমপান
অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারন সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কোনও বাসমালিক ভাড়া বাড়াতে পারেন না। তার পরেও যদি কেউ বেশি ভাড়া নেয়, তা হলে সেটা ঠিক হচ্ছে না।”