মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।— ফাইল চিত্র
সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় পেশ হতে পারে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’-এর প্রস্তাব। একই সঙ্গে ওই দিনই ঠিক হয়ে যেতে পারে রাজ্য সঙ্গীতও। আগামী মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছেন। সেই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সব রাজনৈতিক দলকে।
সম্প্রতি ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ কবে, তা ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা ইতিহাসবিদ সুগত বসুকে উপদেষ্টা করে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস নির্ধারণ কমিটি’ তৈরি হয়। আহ্বায়ক করা হয় বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। গত শুক্র এবং সোমবার বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক হয়। সোমবারের বৈঠকে ১ বৈশাখ ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে পালন করার সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন মুখ্যমন্ত্রী, তা-ও সিদ্ধান্ত হয়। আর সেই অনুমোদন পাওয়ার পরেই সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন মমতা। ওই দিনই ঠিক হয়ে যেতে পারে রাজ্য সঙ্গীত। পশ্চিমবঙ্গ দিবসের প্রস্তাবে রাজ্য সঙ্গীতের উল্লেখ থাকতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এই বৈঠকে যেমন ডাক পেয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দল তৃণমূল, তেমনই ডাকা হয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম-সহ বামফ্রন্টের শরিক দলগুলিকে। সেখানেই পশ্চিমবঙ্গ দিবস কবে, তা ঠিক করা হবে। তবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রস্তাব এনে শাসক দল ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’কে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে চাইছে। বিধানসভা সূত্রে খবর, ৪ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় বাদল অধিবেশন শেষ হচ্ছে। অধিবেশনের শেষ দিনেই এ বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলতে চাইছে রাজ্য সরকার। তাই মুখ্যমন্ত্রী যেমন নবান্নের সর্বদলীয় বৈঠকে হাজির হবেন, তেমনই ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’কে স্বীকৃতি দিতেও বিধানসভার বিতর্কে অংশ নিতে পারেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রাজ্য বিজেপি ২০ জুন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে পালন করে। কারণ, ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার ভোটাভুটিতে বাংলা ভাগের বিষয়টি স্থির হয়েছিল। বাংলা দু’ভাগে ভাগ হয়ে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গ ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়। যার কৃতিত্ব বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে দেয়। সেই ভোটাভুটি হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেই। আর সেই বিধানসভাতেই প্রস্তাব পাশ করিয়ে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ দিবসের রাজনীতিকে পাল্টা জবাব দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আবার গত ২০ জুন রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করেছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। কিন্তু এই দিনটিকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ মানতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে ফোনে অনুরোধ জানিয়ে এবং পরে চিঠি লিখে রাজ্যপালকে এই আয়োজন থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছিলেন মমতা। কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় থেকে রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করেন আনন্দ বোস। তাই এ বার পাল্টা ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ ঘোষণার মাধ্যমে বিজেপি ও রাজভবনকে একযোগে জবাব দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী, এমনটাই মনে করছে বাংলার রাজনীতির কারবারিরা। তাঁদের যুক্তি, তাই সর্বদলীয় বৈঠক মারফত সব রাজনৈতিক দলকে তাঁর এই উদ্যোগে সামিল করতে কৌশলী চাল দিয়েছেন মমতা। সুগতর নেতৃত্বাধীন কমিটিতে ছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহা এবং বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগগা। যদিও, কোনও বৈঠকে যোগদান করেননি বিজেপি বিধায়ক মনোজ।