West Bengal News

রাতে শোভনের বাড়িতে পার্থ, ৪ ঘণ্টার বৈঠক, দলে ফেরাতেই উদ্যোগ?

আনন্দবাজারকে এ দিন বৈশাখী বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু বৈঠক করতে নয়। শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরষ্পরের রাজনৈতিক সহকর্মী দীর্ঘদিন ধরে। সহকর্মী হিসেবেই তিনি দেখা করতে এসেছিলেন। ঘটনাচক্রে সেখানে আমিও ছিলাম। তাই দু’জনের সঙ্গেই আমারও অনেক কথা হয়েছে।’’

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৯ ১৯:৫০
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। পাশে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি এবিপি আনন্দের সৌজন্যে

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হল শোভন চট্টোপাধ্যায়বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মঙ্গলবার রাতে শোভনের গোলপার্কের বাড়িতেই এই বৈঠক হয়েছে বলে খবর। শোভনকে ফের তৃণমূলের জন্য সক্রিয় করে তুলতেই যে মাঝ রাতে প্রাক্তন মেয়রেরবাড়িতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর ছুটে যাওয়া, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের সংশয় নেই। কিন্তু ঠিক কী কথা শোভনের সঙ্গে পার্থের হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও পক্ষই মুখ খোলেনি।

Advertisement

মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শোভনের বাড়ি যান বলে জানা গিয়েছে। রাত দেড়টার পরে তাঁকে বেরোতে দেখা গিয়েছেশোভনের বাড়ি থেকে।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে শোভনের বাড়িতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ ছিলেন, সে কথা অস্বীকার করেননি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এটাকে ঠিক বৈঠক বলতে নারাজ তিনি। আনন্দবাজারকে এ দিন বৈশাখী বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু বৈঠক করতে নয়। শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরষ্পরের রাজনৈতিক সহকর্মী দীর্ঘদিন ধরে। সহকর্মী হিসেবেই তিনি দেখা করতে এসেছিলেন। ঘটনাচক্রে সেখানে আমিও ছিলাম। তাই দু’জনের সঙ্গেই আমারও অনেক কথা হয়েছে।’’

Advertisement

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য এত সহজ সরল ব্যাখ্যা মেনে নিতে নারাজ। এই ভাবনার পিছনেও কারণ একাধিক। গত বছরের শেষের দিকে মেয়র এবং মন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে কার্যত সম্পর্ক ছিন্ন করে রেখেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ফল মোটেও ভাল নয়। উল্টে রেকর্ড উত্থান বিজেপির। তার উপর আগামী বছরই কলকাতা পুরসভা ভোট। শোভনের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনাও রয়েছে। শোভন বিজেপিতে গেলে তৃণমূলের যে বিরাট ক্ষতি, তা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অজানা নয়। আবার শোভনের মানভঞ্জন করে দলে সক্রিয় করতে পারলে তৃণমূলেরও ঠিক ততটাই লাভ বলেই মনে করে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সে কারণেই শোভনকে দলে ফেরাতে কখনও ফিরহাদ হাকিম ফোন করেছেন, কখনও বা শীর্ষ নেতৃত্বের ‘দূত’কে বাড়িতে পাঠিয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এমন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে শুধুই রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে শোভনের বাড়িতে গিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা কাটিয়ে আসবেন, এমন তত্ত্ব মানতে নারাজ পর্যবেক্ষকরা।

আরও পড়ুন: জয় শ্রীরাম রণহুঙ্কার থামান, থামুক ধর্মের নামে হত্যা, প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি বিদ্বজ্জনদের

তবে দীর্ঘক্ষণের আলাপচারিতায় রাজনৈতিক আলোচনা যে একেবারেই হয়নি, এমন কথাও বলেননি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোকপাত না করেও বলেছেন, ‘‘দু’জন রাজনৈতিক সহকর্মী যখন পরষ্পরের সঙ্গে দেখা করেন, তখন রাজনীতি নিয়ে কোনও কথাই হয় না, এ রকমটা হওয়া তো কঠিন। তাই পার্থবাবুর সঙ্গে শোভনদার রাজনীতি নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। আবার রাজনীতির বাইরেও অনেক কথা হয়েছে।’’

সেই রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়বস্তু ঠিক কী ছিল, তা নিয়েই কৌতূহল চরমে। পার্থ যে শোভনকে দলে ফেরার কথাই বলবেন, সেটা নিয়ে সংশয় থাকতে পারে না। শোভনকে মেয়র পদ ফিরিয়ে দিতেও প্রস্তুত— পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তরফ থেকে এরকম প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে বলে খবর। যদিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য তৃণমূল বা শোভনের তরফে করা হয়নি। তবে বৈশাখীর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘আলোচনা অনেক বিষয়েই হতে পারে, তবে সব আলোচনাই যে একটা ইতিবাচক উপসংহারে পৌঁছয়, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই।’’

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় কমল নাথ সরকার ফেলে দিতে পারি, বিজেপি নেতার মন্তব্যে জল্পনা, লক্ষ্য কি এ বার মধ্যপ্রদেশ?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পুরোপুরি না বললেও ইঙ্গিত স্পষ্ট। শোভনকে দলে ফেরাতে তৃণমূল নেতৃত্ব যে তৎপর, তা ফের এক বার স্পষ্ট হল শোভনের বাড়িতে গিয়ে পার্থর এই দীর্ঘক্ষণের আলাপচারিতায়। একই সঙ্গে শোভনকে দলে সক্রিয় করার প্রচেষ্টায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে খুব একটা সফল হননি, সেই ইঙ্গিতও রয়েছে বৈশাখীর ওই মন্তব্যে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement