ফাইল চিত্র।
অতিমারির আগ্রাসন যখন তুঙ্গে, যখন যাবতীয় অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রিত, সেই সময় বাড়ির ভাড়া বাবদ বছরে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৮১ লক্ষ টাকা! আবার কোভিড স্তিমিত হওয়ার পরে সেই বাড়ি ভাড়ার খাতে আয় কমে গিয়ে হয়েছে প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকা!
এই উলটপুরাণ দেখা গিয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ‘ইচ্ছে’-কে ঘিরে। অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয় বাড়িটি। সেন্ট্রি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিরেক্টর অর্পিতার সংস্থা ‘ইচ্ছে’র পত্তন ২০১১-র ২০ মে। সংশ্লিষ্ট বাড়িটির নামও ইচ্ছে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রের খবর, কসবার সেই ইচ্ছে-বাড়িতে অনুষ্ঠান ও শুটিং বাবদ ভাড়া থেকে ওই টাকার কথা জানা গিয়েছে। দিল্লি থেকে আসা এক কর্তার তির্যক প্রশ্ন, “আপনাদের রাজ্যে কি তা হলে কোভিড বিধি মানা হয়নি?” ইডি সূত্রের খবর, করোনার দাপটের সময় বিভিন্ন শুটিং স্টুডিয়ো যখন ঘোষিত ভাবেই বন্ধ ছিল, তখন বিধি ভেঙে ওই বাড়িতে শুটিং করতে দিয়ে ভাড়া নেওয়া হত কি না, সেটাও যাচাই করতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
এ দিকে, পার্থ আর অর্পিতার অ্যাকাউন্টে সব মিলিয়ে আট কোটি টাকার খোঁজ পেয়েছে ইডি। সেই টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন আছে। সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেনের বিষয়টি এখন ইডি-র আতশ কাচের তলায়। তদন্তকারীদের দাবি, প্রাথমিক জেরায় জানা গিয়েছে, অর্পিতা সিনেমার প্রযোজক হতে চেয়েছিলেন। আর সেটা ওই ‘ইচ্ছে’র নামেই করতে চেয়েছিলেন। প্রথমে বাংলা এবং পরে ওড়িয়া-সহ বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রেও টাকা বিনিয়োগ করবেন বলে পরিকল্পনা ছিল তাঁর। ইচ্ছে থেকেই সংস্থার নামকরণও করেন ‘ইচ্ছে’। ইডি আধিকারিকদের জেরায় এ কথা জানান অর্পিতা। ইডি-র দাবি, এই ব্যাপারে স্ক্রিপ্ট রাইটার বা চিত্রনাট্য লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন তিনি। তা হলে কাজ শুরু করেননি কেন? যাঁর দু’টি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা নগদ পাওয়া গিয়েছে, সেই অর্পিতার বক্তব্য, টাকার অভাবেই নাকি তিনি প্রযোজনার কাজ শুরু করতে পারেননি! অথচ সেই অর্পিতাই তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, কমপক্ষে ১২-১৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর নামে। ইডি-র দাবি, তদন্তে খোঁজ মিলেছে পার্থ-অর্পিতার বেশ কিছু যৌথ এলআইসি পলিসিরও।এ দিকে, ইডি-র তদন্তকারীদের দাবি, অর্পিতা নয়, অন্য এক বান্ধবীকে নিয়ে সম্প্রতি মালয়েশিয়া ঘুরে এসেছিলেন পার্থ। দু’জনের পাসপোর্ট ঘেঁটে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। কেন তাঁর এই মালয়েশিয়া সফর? নিছক বেড়াতে? না, বেআইনি পথে টাকা পাচার করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্ট-এর ২০২০-২১ আর্থিক বছরের লাভ-ক্ষতির খতিয়ান দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, আয়-ব্যয় তথ্যের বিপুল গরমিলে ভরা ব্যালান্স শিট। সেই সব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। সংস্থার হাতে ৫৩ টাকা ৫০ পয়সা রয়েছে বলেও দেখানো হয়েছে! সংস্থার দুই ডিরেক্টর অর্পিতা এবং তাঁর জামাইবাবু কল্যাণ ধরের হাতে রয়েছে ১০৭ টাকা! আর স্থায়ী আমানত বাবদ ১২ লক্ষ ২৮ হাজার ৪৪৭ টাকা রয়েছে সংস্থার হাতে।