পরবর্তী শুনানির দিন তাঁকে যাতে পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হয়, বিচারকের কাছে সেই আর্জি জানিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। — ফাইল ছবি।
তাঁর কিছু কথা বলার রয়েছে। সেই কথা বলার জন্য পরবর্তী শুনানির দিন তাঁকে যাতে পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হয়, বিচারকের কাছে সেই আর্জি জানিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার আদালত কক্ষে বিচারককে জেলবন্দি পার্থ বলেন, ‘‘যে দিন পরবর্তী শুনানি, আমারই তো শুনানি, ৫ মিনিটের জন্য অন্তত বলতে চাই।’’
বৃহস্পতিবার আলিপুর জজ্ কোর্টে ছিল শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলার শুনানি। সেখানে সশরীরে হাজির করানো হয়েছিল পার্থকে। সেই সময় তিনি বিচারকের কাছে আর্জি জানান, পরবর্তী শুনানির দিন বিচারক যেন তাঁকে পাঁচ মিনিট সময় দেন। তাঁর কিছু বলার আছে। এই মামলায় পরবর্তী শুনানি আগামী ২৩ মার্চ। সব ঠিকঠাক থাকলে সেই দিনই নিজের বক্তব্য জানাতে পারেন পার্থ। কিন্তু কী বলতে পারেন তিনি? তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা।
বৃহস্পতিবার আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত চত্বরে পরিচিত মহলে নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন পার্থ। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিয়োগকর্তা নই, আমি মন্ত্রী ছিলাম। আমি বেআইনি কাজকে সমর্থন করি না, করব না।’’ পর্ষদ নিজের আইনে চলে বলেও দাবি করেন তিনি। এই প্রথম নয়, গত ২ মার্চ, আগের শুনানির দিনও একই মন্তব্য করেছিলেন পার্থ। সে দিনও আলিপুরের আদালতে পার্থ জানিয়েছিলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন হোক বা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ— সবই স্বশাসিত সংস্থা। নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে মন্ত্রীর কোনও ক্ষমতা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুল শিক্ষক নিয়োগ সংস্থা এসএসসি বা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ— সবটাই স্বাধীন বোর্ড। মন্ত্রী এখানে তো নিয়োগকর্তা নন।’’
পার্থ যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, সেই সময়ে রাজ্যের স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিবিআই সেই অভিযোগের তদন্ত করছে। একই সঙ্গে নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। স্কুলে একটি নিয়োগের ক্ষেত্রে আদালত দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে যৌথ ভাবে তদন্তদের নির্দেশও দিয়েছে। গত বছর ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন পার্থ। তার পর থেকে আদালতে ঢোকা এবং বার হওয়ার সময় বহু বার সংবাদমাধ্যমকে বিভিন্ন কথা বলেছেন। বার বার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। যদিও দলের বিরুদ্ধে কখনও মুখ খোলেননি। বার বার জানিয়েছেন, দলের সঙ্গে তিনি ছিলেন। দলের সঙ্গেই থাকবেন। এমনকি ২ মার্চ, শুনানির দিনও তৃণমূলের প্রাক্তন ‘নম্বর টু’ বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল দল থাকার। থাকবে। আরও বাড়বে।’’ গত বছরের শেষ দিকে বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করেছিলেন। দিয়েছিলেন ‘ডিসেম্বর ডেডলাইন’। সে সময়ও শুভেন্দুর ‘ডেডলাইন’ উড়িয়ে পার্থ বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূলের কেউ কোনও ক্ষতি করতে পারবেন না।’’ তা হলে পরবর্তী শুনানির দিন আদালতে দাঁড়িয়ে কী বলবেন পার্থ? কেন সময় চেয়ে নিলেন? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে।