Arpita Mukherjee

Partha Arpita Case: গাড়িতে বসে হাউহাউ কান্না অর্পিতার, বসে পড়লেন জোকার রাস্তায়, নাটকীয় কাণ্ড

শুক্রবার অর্পিতার স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়ি থেকে নামতে চাননি। জোর করে হাসপাতালে ঢোকানো হয় তাঁকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ ১২:৩৪
Share:

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অর্পিতা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

শুক্রবার দুপুরে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নাটকীয় মুহূর্ত। গাড়ি থেকে নামানোর সময় হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন ইডির হেফাজতে-থাকা এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ধৃত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। শারীরিক পরীক্ষা করানোর গাড়িতে তাঁকে জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে তিনি গাড়ি থেকেই নামতে অস্বীকার করেন! গাড়ির পিছনের আসনে বসে হাউহাউ করে কাঁদতে থাকেন অর্পিতা। শেষমেশ তাঁকে জোর করে টেনে নামানো হয় গাড়ি থেকে। তখন তিনি আবার রাস্তায় বসে পড়ার চেষ্টা করেন। সেখান থেকেও তাঁকে জোর করে তুলে হুইলচেয়ারে করে হাসপাতালে ঢোকানো হয়। হাসপাতালে ঢোকার পরেও হুইলচেয়ারে বসে হাত-পা ছুড়তে থাকেন অর্পিতা। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি কিছু একটা বলারও চেষ্টা করছিলেন। চারপাশের হট্টগোলে তা ঠিকমতো শোনা যায়নি। ওই ভাবেই অর্পিতাকে তাঁর শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

শুক্রবার সকালে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে অর্পিতাকে একটি আলাদা গাড়িতে জোকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামতে চাননি অর্পিতা। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। জোর করে গাড়ি থেকে তাঁকে নামানোর পর হাসপাতালের আপৎকালীন বিভাগের সামনে রাস্তায় বসে পড়েন অর্পিতা। সেখান থেকে তাঁকে তুলে ধরে হুইলচেয়ারে বসানো হয় জোর করে। প্রসঙ্গত, কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, ৪৮ ঘণ্টা অন্তর এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত অর্পিতার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতে হবে। সেই নির্দেশ মতোই শুক্রবার দু’জনকে ওই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল।

বিভিন্ন সূত্রের খবর, সিজিও কমপ্লেক্সে পার্থ-অর্পিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে এবং নথিপত্র মিলিয়ে মিলিয়ে জেরা করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। সারাদিনই প্রায় জেরা চলছে। অর্পিতা খাবার নিয়ে বিভিন্ন বায়নাক্কা করছেন বলেও অসমর্থিত সূত্রের খবর। তাঁকে টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করার সময় অর্পিতা একপ্রস্ত চিৎকার-চেঁচামেচি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি নির্দোষ। এ সবই বিজেপির চাল। তার পরে তিনি আবার বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে।’’ অর্থাৎ, ইডি হেফাজতে যত দিন যাচ্ছে, তত ‘নমনীয়’ হচ্ছেন অর্পিতা।

Advertisement

তিনি যে ক্রমশ ভেঙে পড়েছেন, তার ইঙ্গিত মিলছিল। শুক্রবার দেখা গেল, অর্পিতা একেবারেই ভেঙে পড়েছেন। নইলে সর্বসমক্ষে কান্নায় ভেঙে পড়তেন না। রাস্তায় বসেও পড়তেন না। ইডির একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, অর্পিতা জেরার সময় ‘সহযোগিতা’ করছেন। এমনকি, তিনি এ-ও বলেছেন যে, যে বিপুল পরিমাণ টাকা (৫০ কোটিরও বেশি) তাঁর দু’টি ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গিয়েছে, তাতে তাঁর কোনও অধিকার ছিল না। সেগুলির ধারেপাশেও তাঁকে যেতে দেওয়া হত না। যেমন বিশাল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছে, তাতেও তাঁর কোনও অধিকার ছিল না বলেই অর্পিতা জেরায় দাবি করেছেন। ইডির একটি সূত্রের দাবি, তিনি বলেছেন, তাঁর ফ্ল্যাটগুলি টাকা রাখার জন্য ‘মিনি ব্যাঙ্ক’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালে ঢুকছেন অর্পিতা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

প্রসঙ্গত, এসএসসি নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় রাজ্যের অপসারিত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপর তদন্ত শুরু করে ইডি। ২১ জুলাই পার্থের নাকতলার বাড়ি-সহ ১৫টি জায়গায় হানা দেন ইডির আধিকারিকেরা। তদন্ত চলাকালীন ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে হানা দেয় ইডি। আর সেখানে হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করা হয়। যা এই ঘটনায় বাড়তি মাত্রা সংযোজন করে। এর পর থেকে অর্পিতার নামে থাকা একাধিক সম্পত্তিতে অভিযান চালিয়েছে ইডি। প্রসঙ্গত, গত ২২ জুলাই অর্পিতার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে দীর্ঘ অভিযান চালিয়ে নগদ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। ওই ফ্ল্যাট থেকে বহুমূল্যের গয়না ও বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করেন ইডির আধিকারিকেরা। এর পরই গ্রেফতার করা হয় অর্পিতাকে। ২৭ জুলাই বুধবার বেলঘরিয়ার রথতলার একটি আবাসনে অর্পিতার নামে থাকা দু’টি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় ইডির দল। সেখানে উদ্ধার হয় ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। উদ্ধার করা হয় প্রায় ৬ কিলোগ্রাম সোনা। যার বাজারমূল্য ৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement