প্রতীকী ছবি।
আচমকাই বিছানার চাদরে আগুন জ্বলে উঠছে। আপনাআপনিই সরে যাচ্ছে চেয়ার। নিজে থেকেই লাফিয়ে উঠছে কাচের গ্লাস। কখনও পাথরের টুকরো এসে আলমারির কাচ ভেঙে দিচ্ছে। কখনও আবার ফোনে কেউ বলছেন, আলমারিতে টাকা নেই। কাগজে লেখা হুমকিও আসছে। তাতে লেখা, ‘আজ যাস না। তোদের মেরে খাব!’
গত বছরের নভেম্বরের পর থেকে এ হেন অদ্ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানায় ভয়ে বাড়িছাড়া হয়েছিল হুগলির উত্তরপাড়ার মৈত্র পরিবার। সাড়ে তিন মাস পর বাড়ি ফিরেও ভূতের ভয় কাটেনি তাঁদের। তবে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যদের দাবি, ভূত নয়। এ হেন 'অলৌকিক' কাণ্ডে জড়িত মৈত্র পরিবারের কোনও সদস্য!
উত্তরপাড়ার ৩৫, রামলাল দত্ত লেনে দীপঙ্কর মৈত্রের দোতলা বাড়ি। কলকাতায় একটি সংস্থায় পরামর্শদাতা দীপঙ্করের স্ত্রী তনুশ্রী মৈত্র আঁকা শেখান। ছেলে দীপ্তাক্ষ উত্তরপাড়ার অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। দীপঙ্করের দাবি, ‘‘ভাইফোঁটার পর থেকে বাড়িতে অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটছে। এমনকি, দিন দশেক আগে বিকেলে পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় ছেলে। পরে নিজেই বাড়ি ফিয়ে এসে জানায়, কোন্নগর শ্মশানে তাকে কেউ নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কী ভাবে, তা জানে না।’’
কাগজে লেখা এই হুমকি আসছে উত্তরপাড়ার মৈত্র পরিবারে। —নিজস্ব চিত্র।
আতঙ্কে কোন্নগরে শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছিলেন মৈত্র দম্পতি। তবে বাড়িতে ফেরার পরেও একই ঘটনা! রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তনুশ্রীর দাদা প্রণব আদক। শুক্রবার ওই সংগঠনের সদস্যরা দীপঙ্করদের নিয়ে উত্তরপাড়ায় যান। মেঝেতে ভাঙা কাচের টুকরো, লোহার যন্ত্রপাতি ছড়ানো। দীপ্তাক্ষর হাতেগড়া দুর্গামূর্তির হাত ভাঙা— সবই দেখান দীপঙ্কর।
তবে বিজ্ঞান মঞ্চের হুগলি জেলা সম্পাদক অমিত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘যে সব ঘটনার কথা শুনলাম, তা বাইরের কারও কাজ নয়। হঠাৎ আগুন লাগার পিছনে রয়েছে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এবং গ্লিসারিনের বিক্রিয়া। গদির স্পঞ্জে এখনও গন্ধ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভৌতিক বা অলৌকিক কিছু নেই। এটা লৌকিক ঘটনা। হুমকি লেখা কাগজটিও এই পরিবারের কারওরই। ঘরের ভিতর থেকেই পাথর ছুড়ে কাচ ভাঙা হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানাতে বলেছি।’’ সংগঠনের আর এক সদস্য তুহিন বসু বলেন, ‘‘ভগবানকে এড়িয়ে চলে ভূত। এখানে দুর্গার হাত ভাঙা দিয়েছে। বোঝাই যায় এটা ম্যানমেড। এত ক্ষণ ঘরে রয়েছি। কিন্তু কিছু ঘটেনি। আমাদের মনে হয়, লৌকিক কোনও সূত্র এ ঘরেই লুকিয়ে রয়েছে!’’