Panihati

Panihati accident: মহোৎসবের মাঠময় শূন্যতা আর পুলিশি টহল

রবিবারের দণ্ড মহোৎসবে তিন জনের মৃত্যুর পরে শোকার্ত তল্লাট সোমবার বেবাক ফাঁকা। গোটা এলাকায় লাঠিধারী পুলিশের পায়চারি। রাতেও পুলিশ পিকেট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২২ ০৪:৪৬
Share:

বন্ধ মেলা। সোমবার ফাঁকা মন্দিরের সামনে দর্শনার্থী। ছবি: সুমন বল্লভ

ঠাসাঠাসি ভিড়ের বদলে কার্যত সব শুনশান। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পানিহাটির রামচাঁদ ঘাট রোডের এই রং বদল। রবিবারের দণ্ড মহোৎসবে তিন জনের মৃত্যুর পরে শোকার্ত তল্লাট সোমবার বেবাক ফাঁকা। ব্যস্ততা বলতে কোন্নগর ঘাট থেকে ফেরি এলে কিছু মানুষের ওঠানামা আর মহোৎসবতলা ঘাটে দণ্ড মহোৎসব মন্দিরে পুজো দিতে আসা দু’-চার জনের উপস্থিতি। আর গোটা এলাকায় লাঠিধারী পুলিশের পায়চারি। রাতেও পুলিশ পিকেট।

Advertisement

রবিবার ভিড়ে যেখানে লুটিয়ে পড়েছিলেন বৃদ্ধ সুভাষচন্দ্র পাল ও তাঁর স্ত্রী শুক্লা পাল, সেখানে পড়ে থাকা শ’খানেক চটি-জুতো সোমবার সকালে ঝেঁটিয়ে সাফ করেছেন পুর সাফাইকর্মীরা। সরিয়ে ফেলা হয়েছে ফুল, মালা, ভাঙা চুড়ি, মেলায় আসা কোনও শিশুর হাত ফস্কে পড়ে যাওয়া ভাঙা পুতুল, প্রসাদের ডালা। খুলে নেওয়া হয়েছে মন্দিরের সামনে বাঁধা ম্যারাপ। ভিড়ে মৃত সুভাষবাবু, তাঁর স্ত্রী শুক্লাদেবীর দেহ রবিবার রাত ২টোয় বর্ধমানের পূর্বস্থলী-২ ব্লকে তাঁদের গ্রাম যজ্ঞেশ্বরপুরে পৌঁছয়। সোমবার শেষকৃত্য হয়। মৃত স্থানীয় বৃদ্ধা ছায়া দাসের দেহ পৌঁছয় এ দিন সন্ধ্যায়।

ঘটনাস্থলের পাশেই ইস্কন মন্দিরে এ দিনের হরিনাম সঙ্কীর্তনের অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় সেখানকার গেটেও ‘নো এন্ট্রি’। ভরদুপুরে দণ্ড মহোৎসব মন্দিরে পুজো দিতে হাজির ছিপছিপে দীর্ঘাঙ্গী এক রুশ তরুণী। রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদের বাসিন্দা তুসিপ্রিয়েন আন্দ্রেয়া লাভরভ মায়াপুরে এসেছেন মাস কয়েক আগে। ৫০৬ বছরের পুরনো দণ্ড মহোৎসবের কথা শুনে এসেছিলেন এখানে। রবিবারের ঘটনায় তিনি মর্মাহত। মৃতদের আত্মার শান্তি, অসুস্থদের আরোগ্য কামনায় তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে এসেছেন বলে জানান। ভাষা-সমস্যা ছাপিয়ে আন্দ্রেয়া জানতে চান, কী লেখা আছে মন্দিরের দেওয়ালে? মন্দিরের নাম শোনার পরে বললেন, ‘‘এখানে শ্রীচৈতন্যদেবের পাদস্পর্শ আছে। এসে শান্তি পান সকলে। এখানে কেন এমন ঘটনা ঘটল!’’

Advertisement

মন্দিরের প্রধান সেবায়েত বঙ্কুবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কত মানুষ আগের দিন এসেছিলেন এ বার। দণ্ড মহোৎসবের আগের রাতেই তো মেলা বসে গিয়েছিল। তার উপরে পরের দিনের ভিড় আর দম বন্ধ করা গরম। কেউ কিছু বোঝার আগেই সব তছনছ হয়ে গেল।’’ শতাধিক বছর ধরে পানিহাটি পুরসভাই এই উৎসবের মুখ্য আয়োজক বলে জানান ২০০৬ থেকে সাত বছর পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পদে থাকা সিপিএমের চারণ চক্রবর্তী। বলেন, ‘‘মানুষ এখানে এসে ভাবাবেগে ভেসে যান। ভক্তদের কাছে এটা তীর্থক্ষেত্র। পুর ও পুলিশ প্রশাসন সতর্ক হলে আটকানো যেত এই ক্ষতি। ভিড় ছিল লাগামছাড়া। অভাব ছিল সচেতনতারও।’’ বাম আমলে এক বার এই উৎসবে ভিড়ের চাপে রাস্তার ধারে জিলিপির গরম তেলের কড়াইয়ে পড়ে যান এক বৃদ্ধা। তার পর থেকে মালপাড়া, পাঁচ পাগলা ও বৈষ্ণবী সমিতির মাঠ ছাড়া রাস্তার ধারে দোকান বসানো যাবে না বলে নিয়ম জারি করে পুরসভা। কিন্তু এ বারেও রাস্তার ধারে দোকানের সারি।

এ দিন কিছু দোকান খোলার চেষ্টা হলে পুরসভা জানিয়ে দেয়, এ বছরের মতো মেলা বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, এ বার লাগোয়া ইস্কন মন্দিরে পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানের জন্য বাড়তি ভিড় ছিল। মন্দিরের কাছেই থাকেন রূপা বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ ছিল বলে তা-ও রক্ষা। ইস্কন মন্দিরেও একই রাস্তা দিয়ে বহু ভক্ত গিয়েছেন। এত লোক যে আসতে পারে, তা আমাদের ধারণার বাইরে।’’

ইস্কন জানায়, তারাও ‘পানিহাটি উৎসব’ নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। পানিহাটি হাসপাতালে ভর্তি তিন পুণ্যার্থীর মধ্যে দু’জন এ দিন ছাড়া পান। তৃতীয় জনও ভাল আছেন বলে জানান চিকিৎসকেরা। স্থানীয় বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘এমন একটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী-সহ আমরা সবাই কষ্ট পেয়েছি। পরের বার এমন গরম হলে ভিড়ে জল ছিটোনোর ব্যবস্থা করব। এ বারের দণ্ড মহোৎসব আমাদের দণ্ড দিল, পরের বার অনেক বেশি সচেতন থাকার জন্য।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement