Coronavirus in West Bengal

Durga Puja 2021: করোনামুখী ভিড়ে চিন্তা বাড়ছে শিশুদের নিয়ে, মাস্কহীন জনতার প্রশ্ন, করোনা আর কই!

বেপরোয়া এই জনতাকে দেখেই শিউরে উঠছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, কোভিড কম হচ্ছে— এই ভ্রান্ত ধারণা থেকেই বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২১ ০৬:০৯
Share:

জনজোয়ার। সোমবার রাতে শ্রীভূমিতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বোধনের সন্ধ্যায় মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়ে ভিড়ের মধ্যেই নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত ছিলেন এক দম্পতি। মাস্কের বালাই নেই! অনেক ক্ষণ ধরে তাঁদের কীর্তিকলাপ দেখে এক পুলিশকর্মী বকুনির সুরে তাঁদের বললেন, “মাস্কটা পরুন।” বকুনির কোনও প্রভাব অবশ্য ওই দম্পতির উপরে পড়ল না। বরং ওই দম্পতির মন্তব্য, “করোনা কোথায় বাড়ছে দাদা? রোজই তো ওই সাতশোর ঘরে!”

Advertisement

এই ঘটনা অবশ্য ব্যতিক্রম নয়। উৎসবের শহরে এমন বেপরোয়া মনোভাবই যেন ‘স্বাভাবিক’। অতিমারি পরিস্থিতিতেও পুজোর ভিড়ে গা ভাসিয়েছেন বহু মানুষ। চিকিৎসকদের হাজারো সতর্কতার পরোয়া যেমন তাঁরা করছেন না, তেমনই পুজোকর্তাদের একাংশকেও ভিড়কে উৎসাহ দিতে দেখা যাচ্ছে। সেই তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রীও! কার্যত দ্বিতীয়া থেকেই পুজো মণ্ডপে লোকের আনাগোনা শুরু হয়েছিল, সোমবার যেন তা পূর্ণ চেহারা পেয়েছে। শহরতলির বহু এলাকাতেও একই ছবি।

বেপরোয়া এই জনতাকে দেখেই শিউরে উঠছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, কোভিড কম হচ্ছে— এই ভ্রান্ত ধারণা থেকেই বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে। কারণ, এই ভিড়ের ফলাফল বোঝা যাবে ১৪ দিন পর থেকে। সেই ফলাফল কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই। আইসিএমআর-এর এপিডিমিয়োলজি অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়ের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক সমীরণ পাণ্ডা বলছেন, “দৈনিক আক্রান্ত সাতশো না কি সাত হাজার, তাতে কী আসে যায়! সংক্রমণ দু’ধরনের, উপসর্গযুক্ত এবং উপসর্গহীন। বয়স্কেরা সংক্রমিত হয়ে যদি অতি সঙ্কটজনক হয়ে ওঠেন, তখন তো পুজোর আনন্দই ম্লান হয়ে যাবে।” যদিও জনগণ সে কথা ভাবতে নারাজ।

Advertisement

পঞ্জিকা মেনে এ দিনই পুজো শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন মণ্ডপে, বনেদি বাড়িতে দেবীর বোধন হয়েছে। কালীঘাটের ৬৬ পল্লির পুজোর দায়িত্বে থাকা চার মহিলা পুরোহিতও এ দিন দেবীর বোধন করেছেন। পুজোর রীতিতে এই বদলের হাওয়া দেখা গেলেও ভিড়ের উচ্ছ্বাসে কোনও বদল নেই। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার অরবিন্দ সরণির চেহারা দেখে এক পুলিশ কর্তার মন্তব্য, “কে বলবে, এখনও অতিমারি চলছে! পিলপিল করে লোক আছড়ে পড়ছে।” দক্ষিণ কলকাতায় গড়িয়াহাট, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ চত্বরেও সন্ধ্যা থেকে ভিড় এবং গাড়ির লাইন পড়েছে। পুলিশের একাংশের মতে, হাতিবাগান, চেতলা-কালীঘাট, গড়িয়াহাট-রাসবিহারী অ্যাভিনিউ-সহ কলকাতার এমন কিছু এলাকা আছে, যেখানে আশপাশে একের পর এক নামী পুজো হয়। ভিড় ওই এলাকাগুলিতেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

এমনকি, শিশুদের নিয়েও মণ্ডপে-মণ্ডপে ঘুরছেন বাবা-মায়েরা। এর ফল বিপজ্জনক হতে পারে বলে জানাচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, শুধু করোনা নয়, ঋতু বদলের সময়ে বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তাদের অনেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। কোমর্বিডিটি থাকা শিশুদের মৃত্যুও হচ্ছে। শিশুরোগ চিকিৎসক তথা ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পিডিয়াট্রিকস-এর জাতীয় সহ-সভাপতি অতনু ভদ্র বলেন, “সন্ধ্যার পর থেকেই ঠান্ডা পড়ছে। সেটা শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ওই সময় ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত হয়। তার উপর শিশুরা বেশি ক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে পারে না। সেখানে মাস্ক ছাড়াই তাদের নিয়ে ভিড়ে ঘোরা একেবারেই উচিত নয়। কারণ, তাতে খুব সহজেই যে কোনও ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।”

মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, উৎসবে নিয়ন্ত্রিত থাকার বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে ঠিক মতো পৌঁছয়নি। সরকারি তরফেও কোভিড সচেতনতার বার্তা তুলনায় কম জোরালো। তার উপরে খোদ মন্ত্রী-নেতারাই বিভিন্ন পুজোর সঙ্গে যুক্ত। তাঁরাও সচেতনতা তৈরিতে সে ভাবে নামেননি। সর্বোপরি জনসাধারণের গাফিলতিও রয়েছে। এই ত্র্যহস্পর্শেই ভিড় হচ্ছে।

বোধনের সন্ধ্যা পেরিয়ে তখন রাত গড়াচ্ছে। হাওড়া এবং শহরতলি থেকে ছোট-বড় গাড়ি সার দিয়ে ছুটছে কলকাতার দিকে। বি টি রোডে সেই গাড়ির স্রোত সামলাতে সামলাতে এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, “রাস্তায় এখন যত গাড়ি রয়েছে, কয়েক দিন পরে করোনা ঝড় উঠলে এত অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যাবে তো?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement