ফাইল চিত্র।
রাজ্যে আমপান-পরবর্তী সময়ে ত্রাণ বিলি ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ এবং করোনা চিকিৎসায় অপ্রতুল পরিকাঠামোর প্রশ্নই সর্বদল বৈঠকে মূল হাতিয়ার হতে চলেছে বিরোধীদের। সেই সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সাহায্যের দাবিও ওই বৈঠকে ওঠার কথা। বৈঠকের আগের রাত পর্যন্ত বিভিন্ন শিবির থেকে যা ইঙ্গিত মিলছে, তাতে তিন মাস আগের প্রথম সর্বদলের তুলনায় এ বার বিরোধীদের সুর কিছুটা উঁচু সুরে বাঁধা হওয়ারই সম্ভাবনা থাকছে।
ঘূর্ণিঝড়ের পরে ত্রাণ বিলি ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে অন্যদের হাতে বাড়ি তৈরির টাকা বা অন্যান্য আর্থিক সহায়তা পৌঁছে যাওয়া এবং করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিকাঠামো-সহ নানা দুর্বলতার কথাই মূলত আজ, বুধবার সর্বদল বৈঠকে তুলতে চান বিজেপি, বাম ও কংগ্রেস নেতারা। পক্ষান্তরে তৃণমূলের চেষ্টা থাকবে রাজ্য সরকারের যথাসাধ্য প্রয়াসের কথা বলে পাল্টা যুক্তি দেওয়ার।
নবান্নে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সর্বদল বৈঠক হতে চলেছে। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ওই বৈঠকে থাকার কথা। তৃণমূল সূত্রের খবর, চলতি পরিস্থিতিতে এমন বৈঠকের প্রস্তাব নিয়ে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রথম ফোন করেছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে। এই মুহূর্তে রাজ্যের প্রবীণতম নেতা হিসেবে বিমানবাবুর মতামত জানতে চেয়েছিলেন মমতা। বৈঠক হলে যে কোনও অসুবিধা নেই, বিমানবাবু তা জানানোর পরে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন স্পিকার বিমানবাবুর সঙ্গে। তার পরে পর্যায়ক্রমে মুখ্যমন্ত্রী ফোনে কথা বলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে।
এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, বিজেপির তরফে দিলীপবাবুর সঙ্গে পরিষদীয় দলনেতা মনোজ টিগ্গা ও জয়প্রকাশ মজুমদার আজ বৈঠকে যাবেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সঙ্গে থাকার কথা বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর। কংগ্রেসের তরফে সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ও বিধায়ক অসিত মিত্রকে বৈঠকে পাঠানো হচ্ছে। শাসক দলের তরফে থাকবেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। পার্থবাবু মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘বিশেষ পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর এমন একটা উদ্যোগের পাশে সকলে থাকবেন, এটাই প্রত্যাশিত। আশা করব, বিরোধীরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই বৈঠকে আসবেন।’’
আরও পড়ুন: দেগঙ্গায় বিক্ষোভের ঘটনায় গ্রেফতার ১৪ জন
তাঁরা বৈঠকে কী বলতে চান, এই প্রশ্নের জবাবে দিলীপবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে এর আগে দু’বার চিঠি দিয়েছি। সেই চিঠিতে যা লিখেছিলাম, তার উপরেই কথা বলব।’’ লকডাউনের মধ্যে রেশনে অনিয়ম ও আমপান-এর ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতির অভিযোগই মূলত ছিল দিলীপবাবুর চিঠিতে। সেই সঙ্গে মৃতদের সৎকারে ‘অসংবেদনশীলতা’র কথাও তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলতে চান।
প্রায় একই সুর বাম ও কংগ্রেসেরও। সুজনবাবুর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র যে টাকা দেয়নি, সেই কথা অবশ্যই থাকবে। কিন্তু ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি সাঙ্ঘাতিক মাত্রায় পৌঁছেছে। যে কোনও দিন পান চাষ করেনি, সে পান বরোজের জন্য ক্ষতিপূরণ নিয়ে চলে যাচ্ছে! মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো পুলিশকে জানাতে গেলে থানা অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগের স্বীকৃতিপত্র দিচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী যখন ডেকেছেন, এগুলোও তাঁর জানা দরকার।’’ প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘বাড়ির ক্ষতিপূরণের ফর্ম এমন ভাবে করা হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষকে পঞ্চায়েত বা স্থানীয় স্তরে কারও উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে এবং সেই সুযোগে অনিয়ম হচ্ছে। হাওড়া, বসিরহাট, উত্তরবঙ্গ-সহ নানা জায়গায় কোভিড হাসপাতাল আরও বাড়ানো দরকার বলেও আেমরা মনে করি।’’