—প্রতীকী ছবি।
সমবায় সমিতির ভোটে যা ছিল ‘নন্দকুমার মডেল’, পঞ্চায়েত ভোটে কি তাই নাম বদলে ‘রুইপুকুর মডেল’?
গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বোর্ড গঠন রখতে প্রথম দিনেই নদিয়ার রুইপুকুরে হাত মিলিয়েছিল রাম-বাম। দ্বিতীয় দিনে সেই প্রবণতা আরও জোরালো হল। রাজ্যের নানা জায়গায় বিরোধীরা এককাট্টা হল। কোথাও সিপিএম শেষ মুহূর্তে বাঁচিয়ে দিল বিজেপির বোর্ড, কোথাও তৃণমূলেরই বিক্ষুব্ধ অংশকে দলে টানা হল।
বুধবার নদিয়ার কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের ভীমপুর পঞ্চায়েতে সিপিএম এবং আইএসএফের সমর্থনে বোর্ড গড়েছে বিজেপি। ওই পঞ্চায়েতে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও তাদের দুই সদস্যকে ভাঙিয়েছিল তৃণমূল। দুই নির্দল সদস্যের সমর্থনও সঙ্গে ছিল। শেষ মুহূর্তে পদ্ম-শিবিরের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় সিপিএম ও আইএসএফ। তাদের দুই সদস্যের ভোটেই বিজেপি প্রধান পদ ছিনিয়ে নেয়। উপপ্রধান সিপিএম সদস্য।
নদিয়ার কালীগঞ্জ ব্লকের দেবগ্রাম পঞ্চায়েতে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল তৃণমূলের। কিন্তু প্রধান প্রার্থিপদ নিয়ে 'গৃহযুদ্ধ' বাধে। সেই সুযোগে 'বিক্ষুব্ধ' তৃণমূল সদস্যদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে বিজেপি। সমর্থন জোগান সিপিএমের দুই সদস্য। সিপিএমের অন্য দুই সদস্য তৃণমূলের ঘোষিত প্রধান পদপ্রার্থীকে সমর্থন করলেও বোর্ড তারা পায়নি। মিলিজুলি পঞ্চায়েত হয়েছে। অনেকটা একই রকম ঘটনা ঘটেছে জলপাইগুড়ির খারিজা বেরুবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে। সেখানে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও প্রধান পরিবর্তন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বিদায়ী প্রধান ও উপপ্রধান দলেরই প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়ান। তাঁদের সমর্থন করেন বেশির ভাগ বিজেপি সদস্য। ফলে দু’তরফের আসন সমান। টস জিতে যায় বিজেপি শিবির। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ভিঙ্গোল পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে ঠেকাতে বাম, কংগ্রেসকে সমর্থন করেন বিজেপির সদস্যেরা।
পূর্ব মেদিনীপুরের আটটি ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়েছে এ দিন। মহিষাদল ব্লকের অমৃতবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএমের সমর্থনে বোর্ড দখল করে বিজেপি। তমলুকের বল্লুক ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির সমর্থনে প্রধান নির্বাচিত হন এক নির্দল। কোলাঘাটের বৈষ্ণবচকে সিপিএম, নির্দল এবং কংগ্রেসের সমর্থনে বোর্ড দখল করেছে বিজেপি।
সিপিএমের ঘোষিত নীতি ছিল, নিজেরা বোর্ড গড়তে না পারলে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। নিচুতলার নেতা-কর্মীরা তা মানতে নারাজ— সেটা কার্যত স্পষ্ট। মঙ্গলবার রুইপুকুরের ঘটনায় সিপিএম নেতৃত্ব দলীয় সদস্যপদ খারিজের ‘শাস্তি’ ঘোষণা করলেও তা উপেক্ষা করেই দ্বিতীয় দিনেও বহু এলাকায় বিরোধী জোটের হাত ধরেছেন নেতা-কর্মীরা।
তৃণমূলের বরাতেও সিপিএম বা বিজেপির সমর্থন জুটেছে দু’এক জায়গায়। যেমন ভগবানপুর ১ ব্লকের গুড়গ্রাম পঞ্চায়েতে বাম সদস্যদের সমর্থনে বোর্ড গঠন করেছে তৃণমূল। কোলাঘাটের বৃন্দাবনচক এবং গোপালনগরেও তাই। কোচবিহারের মাথাভাঙার জোরপাটকিতে আবার বোর্ড গড়তে দলের নির্দেশ অমান্য করে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন তিন তৃণমূল সদস্য। তাঁদের ছ’বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।