ভাঙড় অস্ত্রে শান। সোমবার কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল। ছবি: সুমন বল্লভ
ধৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং পাওয়ার গ্রিডের কাজ বন্ধের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিজ্ঞপ্তির দাবি নিয়ে সোমবার ভাঙড় উঠে এল কলকাতায়। আর বহু দিন পর তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো হাতে গরম বিষয় পেয়ে ভাঙড়ের কাঁধে কাঁধ মেলাল বিজেপি ছাড়া সিপিএম, আরএসপি, পিডিএস, নকশাল-সহ সব বিরোধীই!
‘ভাঙড় আন্দোলনের সংহতি কমিটি’ এবং ‘জমি-জীবিকা-বাস্তুরক্ষা কমিটি’র ডাকে কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এ দিনের মহামিছিলে পাওয়ার গ্রিড সংলগ্ন মাছিভাঙা ও খামারআইট গ্রামের প্রায় দেড় হাজার আন্দোলনকারী যোগ দেন। তাঁদের সঙ্গে হাঁটে সিপিআই (এম-এল) রেড স্টার, সিপিএম, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, সিপিবি, এপিডিআর, নয়া বাংলা-সহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। মহামিছিলের ব্যানারে লেখা ছিল— ‘প্রতিবাদের তিনটি নাম, ভাঙড়-সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম’।
বস্তুত, ভাঙড় থেকে শুরু করে আউশগ্রাম বা বোলপুর— নানা জায়গায় এখন ফোঁড়ার মতো সমস্যা পেতে উঠুক এবং সরকার তার জেরে বিপাকে পড়ুক, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থেই তা চাইছে বিরোধীরা। সেই জন্য কোনও বিষয় হাতে পেলেই বিরোধীরা প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে প়ড়ছে বলে শাসক শিবির সূত্রের ব্যাখ্যা। তবে একই সঙ্গে শাসক দলের নেতারা বলছেন, সমস্যা বাধানোর চেষ্টা করে বিশেষ লাভ হবে না। বোলপুরের মতো ঘটনা কড়া হাতেই মোকাবিলা করা হবে বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতিবাদী ব্যানারের বক্তব্য সিপিএমের পক্ষে অস্বস্তিকর হলেও শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেই দলের বহু কর্মী-সমর্থককে মিছিলে পাঠিয়েছিল তারা। এপিডিআর নেতৃত্ব এবং সুজাত ভদ্র যদিও মনে করেন— সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম এবং লালগ়ড়ে যাঁদের ঘৃণ্য ভূমিকা ছিল, ভাঙড় আন্দোলনে তাঁদের উপস্থিতি কাম্য নয়। যা নিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, ‘‘পুরনো কথা মনে করতে চাইলে শুধু সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কেন, নকশালবাড়ি, সাঁওতাল বিদ্রোহ বা বঙ্গভঙ্গকে টেনে এনেও অনেক কথা বলতে হয়! এই সময়ে যাঁরা এমন কথা বলছেন, এই আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে!’’ এ দিনের মিছিলের জন্যই ভাঙড়ের কাছে সমাবেশ পিছিয়ে বৃহস্পতিবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বাম পরিষদীয় দল আজ, মঙ্গলবারই ভাঙড়ে কথা বলতে যাবে।
সুজাতবাবু বা এপিডিআরের নাম না করে পিডিএসের সমীর পূততুণ্ডও বলেন, ‘‘যখন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার কথা, তখনও তার উপযুক্ত বাতাবরণ গড়ে তোলা যায়নি।’’ আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য, পিডিএস নেত্রী অনুরাধা দেব, ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র, শ্রমিক আন্দোলনের নেতা কুশল দেবনাথ প্রমুখ মিছিলে ছিলেন। মিছিল শেষে ধর্মতলায় কিছুক্ষণ অবরোধ করেছিলেন আন্দোলনকারীরা।
ভাঙড়-কাণ্ডে দুই মৃত্যু এবং পুলিশের উপরে হামলা মিলিয়ে তিনটি মামলার তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি। গ্রিড সংলগ্ন কামারবাড়ি ও শ্যাম ইটভাটা এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে এ দিন কথা বলে সিআইডি। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ঘটনার দিন সকালে পাওয়ার গ্রিডের নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকে পাঁচটি রাইফেল ছিনতাই হয়। পরে গ্রিড সংলগ্ন পুলিশ ফাঁড়ি থেকে একটি রাইফেল ও পুলিশের পোশাক লুঠ হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশের পোশাক পরে আরাবুল বাহিনী পুলিশের সঙ্গে থেকে গুলি চালিয়েছে। সিআইডি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই সময় কোনও প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান পাওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ গ্রামগুলিতে এ দিন পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের তরফে প্রকল্পের পক্ষে সচেতনতার প্রচার শুরু হয়েছে।