রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পর বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভায় পাশ হয়ে যাওয়া গণপ্রহার প্রতিরোধ বিলে সম্মতি দেওয়ার আগে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার ইঙ্গিত দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। একই মেমো নম্বরে দু’টি বিল ছাপানো হয়েছিল এবং বিধায়কদের আগাম জানার সুযোগ না দিয়েই পাশ হওয়া বিলটিতে প্রাণদণ্ডের সংস্থান শেষ মুহূর্তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, এই অভিযোগ নিয়ে মঙ্গলবার রাজ্যপালের দ্বারস্থ হন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। তার পরেই রাজভবনের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, রাজ্যপাল সাংবিধানিক দিক থেকে গোটা বিষয়টি ভেবে দেখবেন। বিধানসভার কার্যবিবরণী তিনি দেখতে পারেন এবং প্রয়োজনে স্পিকার ও রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। পাশ হয়ে যাওয়া বিল নিয়ে এমন বিতর্ক এবং রাজভবনের সক্রিয়তার নজির সাম্প্রতিক কালে বিশেষ নেই।
রাজ্যপালের অবস্থানের কথা জেনে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বা পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিশদে কোনও মন্তব্যে যাননি। তবে মুখ্য সরকারি সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘বিল পাশ করা বিধানসভার এক্তিয়ার। রাজ্যপালের ভূমিকাও সংবিধানে নির্দিষ্ট। তিনি চাইলে বিলের বিষয়ে সরকারের মতামত নিতে পারেন। তবে এ ভাবে বিজ্ঞপ্তি না দিলেই ভাল হতো।’’
সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ মেনে বিধানসভার গত অধিবেশনে পাশ হয়েছিল গণপ্রহার প্রতিরোধ বিল। প্রথমে বিলি হওয়া বিলে গণপ্রহারে মৃত্যুর ক্ষেত্রে অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কথা ছিল, পরে একই মেমো নম্বরের বিলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে প্রাণদণ্ডের সংস্থান রাখা হয়েছিল। তখনই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিরোধী নেতারা। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে এ দিন কংগ্রেসের বিধায়ক মান্নান, নেপাল মাহাতো, আল বিরুনি এবং সিপিএমের সুজনবাবুরা জানান, বিলে কোনও সংশোধনী না এনেই প্রাণদণ্ডের সংস্থান ঢোকানো হয়েছিল। ওই একই অধিবেশনে স্টাফ সিলেকশন কমিশন (এসএসসি) বিলোপ করার আইন আবার বিলোপ করতে বিল আনা হয়েছিল আর্থিক দায়ভারের প্রসঙ্গ ছাড়াই। যে ভাবে বিল পাশ করানো হচ্ছে, তাতে কেউ আইনি পথে গেলে রাজ্য সরকার বিপাকে পড়তে পারে বলে রাজ্যপালের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিরোধী নেতারা।
পরে সুজনবাবু বলেন, ‘‘গণপ্রহারের বিল নিয়ে বিধানসভার সঙ্গে কার্যত তঞ্চকতা করা হয়েছে। একই বিলের দু’টি খসড়া। একটিতে প্রাণদণ্ডের সংস্থান কোনও সংশোধনী ছাড়াই ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিধানসভায় বলা হয়েছে, এটা নাকি ‘টেকনিক্যাল’ ত্রুটি! প্রাণদণ্ডের বিষয়ে নীতিগত বিতর্কও আছে।’’ বিরোধী দলনেতা মান্নানের বক্তব্য, ‘‘মুলতুবি প্রস্তাব গ্রহণ থেকে বিল নিয়ে আলোচনা, কোনও বিষয়েই বিধানসভার মর্যাদা রক্ষা করতে পারছে না সরকার পক্ষ।’’ রাজভবনের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাণদণ্ডের বিষয়টি বিলে ঢুকিয়ে দেওয়া স্রেফ মুদ্রণ প্রমাদ হতে পারে না বলে বিরোধী নেতারা রাজ্যপালকে জানিয়েছেন। রাজ্যপাল সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিষয়টি দেখবেন।