দাসপুরের নন্দনপুরের সিপিএম লোকাল কার্যালয়ে ভাঙচুরের পর (বাঁ দিকে)। মেদিনীপুরে সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ের সামনে পাহারা (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র
ফল প্রকাশের পরে দলের কর্মী-সমর্থকদের সংযত থাকার বার্তা ছিলই, তাতে অবশ্য লাভ হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে বিরোধী কর্মীদের উপরে হামলা, দলীয় অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দাসপুর, ঘাটাল থেকে শালবনি, গোয়ালতোড়, কেশিয়াড়ি, দাঁতন— বাদ নেই কোনও এলাকা।
দলের নিচুতলার উপর নিয়ন্ত্রণ নেই তৃণমূলের। এমন অভিযোগ অনেক দিনের। এ বার সেই নিচুতলায় লাগাম পরাতেই উদ্যোগী জেলা নেতৃত্ব। পরিস্থিতি এমনই যে কড়া নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁরা। শুক্রবারই ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “আমরা এলাকায় হিংসা ছড়াতে দেব না। কর্মীদের এমনই নির্দেশ দিয়েছি। এর পরেও কেউ গণ্ডগোল করলে দল দায় নেবে না। পুলিশি হস্তক্ষেপ করলেও আমরা নাক গলাবো না।”
ফল বেরনোর পরই অশান্তি শুরু হয়েছে ঘাটাল মহকুমা জুড়ে। কোথাও সিপিএমের দলীয় অফিস ভাঙচুর, কোথাও বাড়ি-সহ দোকান ভাঙচুর। সমর্থকদের মারধরও চলছে পাল্লা দিয়ে। আর এর জেরেই ভাল ফল করেও স্বস্তিতে নেই ঘাটালের তিন তৃণমূল বিধায়ক-সহ দলীয় নেতৃত্ব।
কর্মীদের সংযত করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা। পরিস্থিতি যাতে নাগালের বাইরে চলে না-যায়, তার জন্য সতর্ক বিধায়কেরাও। বৃহস্পতিবার রাতেই ঘাটাল, চন্দ্রকোনা ও দাসপুরের নেতৃত্বরা দফায় দফায় বৈঠকে বসেন। শুক্রবার কলকাতার বৈঠকে যাওয়ার আগে সাত সকালেই নিজের বাড়িতে সমস্ত অঞ্চলের নেতৃত্বদের নিয়ে বৈঠক করেন ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই। ঘাটালের তৃণমূল নেতা দিলীপ মাঝি বলেন, “ভোটের পরে সিপিএমের কর্মীরাও আমাদের বহু কর্মীকে মারধর করেছে। তখনও আমরা কর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলাম। এ বার আমাদের আরও দায়িত্ব বেড়েছে। প্ররোচনায় পা না-দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এরই মধ্যে ঘাটাল মহকুমায় সিপিএমের একাধিক দলীয় অফিস ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুধু ঘাটাল মহকুমাতেই নয়, চন্দ্রকোনা রোড, গোয়ালতোড়েও একই পরিস্থিতি। রাশ টানতে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশও। জেলা পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “গণ্ডগোল এড়াতে সমস্ত রকম ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। পুলিশি টহলও বাড়ানো হয়েছে।”
ভোট মিটতেই ঘাটালে বিক্ষিপ্ত অশান্তি শুরু হয়েছিল। পুলিশ ও শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ফল প্রকাশের পর ফের গণ্ডগোল যে হবে, এমন আশঙ্কা ছিলই।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই ঘাটালের কুঠিঘাট, বরদা, জলসরা, গঙ্গাপ্রসাদ, শোলাগেড়িয়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় সিপিএমের প্রায় আটটি কাযার্লয়ে ভাঙচুর চালায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। সিপিএমের একাধিক পোলিং এজেন্ট, কর্মী-সমর্থকদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। চন্দ্রকোনার পিয়ারডাঙা, ঝাঁকরা, কুঁয়াপুর, বালা, কৃষ্ণপুর, মনোহরপুরে সিপিএমের পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়।
দাসপুরেও একই চিত্র। সিপিএমের বহু দলীয় অফিসও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। সিপিএমের অভিযোগ, শাসক দলের নেতা-কর্মীদের হামলায় বৃহস্পতিবার রাতেই বহু কর্মী ঘরছাড়া হয়েছেন। আরও অনেকে এলাকা ছাড়ছেন ভয়ে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “গোটা মহকুমায় এখন পর্যন্ত প্রায় কুড়িটির মতো দলীয় অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, সিপিএম করার অপরাধে ঘাটাল মহকুমা জুড়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বয়কটের ফতোয়াও দেওয়া হয়েছে— হয় জরিমানা দিতে হবে না হলে এলাকা ছাড়তে হবে। কিছু এলাকায় প্রতিরোধ
হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনকে জানিয়েছেন তাঁরা।
সিপিএমের দাসপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক গুণধর বসু বলেন, “পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, এখনই পুলিশ হস্তক্ষেপ না করলে যে কোনও সময় বড় অঘটন ঘটে যাবে। কর্মীরা ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোনোর সাহসও পায়নি। আমাদেরও দলীয় অফিসে আসতে নিষেধ করেছে তৃণমূলের লোকজন।”
দাসপুরের তৃণমূল নেতা সুকুমার পাত্র ও চন্দ্রকোনার অমিতাভ কুশারী ও গৌতম ভট্টাচার্যরা জানান, দু’এক জায়গায় বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোলের খবর এসেছে। এলাকায় কোনও অশান্তি করা যাবে না, অশান্তি করলে দল কোনও দায়িত্ব নেবে না—কর্মীদের এমনই বার্তাই দেওয়া হয়েছে। আমরাও সতর্ক।”