Journalist arrested

আনন্দবাজারের সাংবাদিক গ্রেফতারে সরব বিরোধীরা, আশ্বাস মমতার

বুধবার সকালে গ্রেফতারের পরে দেবমাল্য ও আরও এক ধৃত বাসন্তী দাসকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করিয়েছিল পুলিশ। তাঁদের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

খড়্গপুরে আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীকে গ্রেফতারের ঘটনায় সরব হল রাজ্যের বিরোধী শিবির। সাংবাদিক দেবমাল্যের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাঁর অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে কলকাতা প্রেস ক্লাব এবং জেলার একাধিক সাংবাদিক সংগঠন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছেন, প্রশাসন ‘সংবেদনশীলতা’র সঙ্গে বিষয়টি দেখবে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপারের কাছে ঘটনার খোঁজও নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

বুধবার সকালে গ্রেফতারের পরে দেবমাল্য ও আরও এক ধৃত বাসন্তী দাসকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করিয়েছিল পুলিশ। তাঁদের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারের দাবি, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে‌। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বলেছেন, তফসিলি জাতি ও জনজাতি সংক্রান্ত আইনে মামলা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ পদক্ষেপ করেছে। আইনি বিষয় আদালতের বিবেচনাধীন। তবে পুলিশ-প্রশাসন যথাসম্ভব সংবেদনশীল ভাবেই বিষয়টি দেখবে বলে তাঁর আশ্বাস।

ওই ঘটনার সূত্রেই এ দিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স হ্যান্ডলে বলেছেন, ‘‘গত ২৭ অগস্ট আনন্দবাজারের খড়্গপুর সংস্করণে শহরের সাঁজোয়াল এলাকায় চোলাই মদের রমরমা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়...। এই খবরে পুলিশ-প্রশাসনের অকর্মণ্যতা নিয়ে প্রতিক্রিয়া হয় এবং কী ভাবে বাড়িতে চোলাইয়ের ব্যবসা চলছে, তা তুলে ধরা হয়...। পুলিশ কয়েক জন মদ্যপকে ধরে জনরোষ সামাল দিতে চায়। কিন্তু মূল অভিযুক্তেরা গা ঢাকা দেয়। যিনি অভিযোগ করেছিলেন, (এর পর) চোলাইয়ের কারবারিরা তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে এবং অভিযোগ তোলা নিয়ে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়।’’ বিরোধী দলনেতার আরও বক্তব্য, ২৮ অগস্ট চোলাইয়ের কারবারির আত্মীয়েরা অভিযোগকারিণী ও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের নামে অভিযোগ দায়ের করে। ওই অভিযোগ ধরে পুলিশ দ্রুত কাজে নেমে পড়ে। তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের বিরুদ্ধে অত্যাচার প্রতিরোধ আইনের ৩ (১) (আর) (এস) ধারায় এফআইআর হয়। সাংবাদিক দেবমাল্য এবং অভিযোগকারিণী বাসন্তীকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করতে গেলে সাধারণ নাগরিক বা খবর পরিবেশন করলে সাংবাদিকদের রেহাই নেই। বোঝাই যাচ্ছে, তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের বিরুদ্ধে অত্যাচার প্রতিরোধ আইনকে ব্যবহার করা হয়েছে সবক শেখানোর জন্য! এর পরে উত্তরপ্রদেশ বা মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে এই সরকারের কিছু বলার মুখ থাকে না। ওই সব রাজ্যে এই আইনের অপব্যবহার হয়।’’ সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বদলে পুলিশ-প্রশাসন ব্যস্ত, কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর নজরে ভাল সাজা যায়! সেই কারণেই অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, সাধারণ নাগরিক ও সাংবাদিকদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে।’’

দেবমাল্যের পরিবারের বক্তব্য, পুলিশ বাড়ি ঘিরে ফেলায় সকলেই ভয় পেয়েছিলেন। আইন-আদালতের উপরে তাঁদের পূর্ণ আস্থা আছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, ‘‘ও নিশ্চয়ই ন্যায় বিচার পাবে।’’

কলকাতা প্রেস ক্লাবও এ দিন বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘খড়্গপুরে কর্তব্যরত সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীর গ্রেফতারের বিষয়ে প্রেস ক্লাব, কলকাতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং পুলিশ-প্রশাসনের ইতিবাচক হস্তক্ষেপের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ পুলিশের কাছে স্থানীয় জনজাতির পক্ষ থেকে করা হয়েছে, তা আদালতের বিচারাধীন। পাশাপাশি এ-ও দেখতে হবে, সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহের অধিকার যেন সুরক্ষিত থাকে।’’ দেবমাল্যদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছে একাধিক সংগঠন। ‘ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর বর্ধমান জেলা শাখা বর্ধমান শহরে আজ, শুক্রবার প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement