নীতি আয়োগের বৈঠকে যাচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ নানা প্রকল্পে রাজ্যের পাওনা আটকে রেখেছে বলে সরব রাজ্য সরকার। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’র প্রতিবাদে রাজনৈতিক কর্মসূচিও নিয়েছে। সেই সময়েই নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন যাচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা। তৃণমূল অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে, নীতি আয়োগের ওই বৈঠকে বাংলার বলার সুযোগ আসে অনেক পরে। তা ছাড়া, এত টাকা বকেয়া রেখে এমন বৈঠক ডাকাও অর্থহীন।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর না যাওয়ার সম্ভাবনার প্রসঙ্গ তুলে লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বুধবার বলেছেন, ‘‘রাজ্যের দাবি বা পাওনা নিয়ে আলোচনার এটাই বড় মঞ্চ। এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর অবশ্যই যাওয়া উচিত। বিষয়টা রাজ্যের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের পাওনা দিচ্ছে না বলে ওঁরা এত কথা বলেন, অথচ মুখ্যমন্ত্রী নীতি আয়োগে যাবেন না, এটা কেমন নীতি!’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকতে পারে। কিন্তু রাজ্যের প্রয়োজনে বিরোধী দল থেকে মুখ্যমন্ত্রী আমাকে যেতে বললে আমিও রাজি আছি। উদারতা থাকলে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের আসরে বিরোধী দল থেকেও কাউকে প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠাতে পারেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘সরকারি বৈঠকে অবশ্যই যাওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের বৈঠকে তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়ে যান না। আলাদা করে দেখা করতে যান ফাইলপত্র এবং কোনও আধিকারিক ছাড়া। কখন যাবেন, কখন যাবেন না, সবটাই ঠিক হয় রাজনৈতিক স্বার্থে। এই জন্যই বলতে হয়, নীতি আয়োগে যাবেন না, দুর্নীতি আয়োগ হলে হয়তো যেতেন!’’
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘নীতি আয়োগের বৈঠকে না যাওয়ার অর্থ মুখ্যমন্ত্রী অন্ধ কেন্দ্র বিরোধিতার কারণে বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করছেন। তবে নীতি আয়োগের বৈঠকে গিয়ে নীতি নিয়ে কথা বলার কোনও নীতি তৃণমূলের নেই! চরম অদূরদর্শী, দুর্নীতিগ্রস্ত, অনুদান-নির্ভর একটা সরকার এমনিতেই বাংলাকে শেষ করে দিয়েছে। তার উপরে বেলাশেষে নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করে বাংলার বর্তমান প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে আরও সর্বনাশের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে।’’
তৃণমূলের সাংসদ ও জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দু শেখর রায় অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘যে সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, অর্থনৈতিক অবরোধ শুরু করেছে, তাদের তাঁবেদার নীতি আয়োগের ওই বৈঠক লোকদেখানো। সেখানে গেলেও আমাদের বলার সুযোগ আসে সবার শেষে, যখন কেউ থাকেন না। আর এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি পাওনা বকেয়া রেখে এই বৈঠক ডাকাই অর্থহীন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বাংলাকে ভাতে মারার যে চক্রান্ত চলছে, তার অবসান ঘটাতে এই সরকারের বিদায় ছাড়া রাস্তা নেই!’’