সবং যাচ্ছেন মানস

দলত্যাগ রুখতে আদালতের পথে বিরোধীরা

দলত্যাগী বিধায়ককে কারণ দর্শানোর চিঠি, স্পিকারের কাছে আবেদন, রাস্তায় নেমে সমাবেশ— এ সব হয়েই চলেছে। তাতে কাজ হচ্ছে না কিছুই। শেষ পর্যন্ত দলত্যাগের হিড়িক আটকাতে আইনের দরজায় কড়া নাড়তে চলেছে বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৭
Share:

দলত্যাগী বিধায়ককে কারণ দর্শানোর চিঠি, স্পিকারের কাছে আবেদন, রাস্তায় নেমে সমাবেশ— এ সব হয়েই চলেছে। তাতে কাজ হচ্ছে না কিছুই। শেষ পর্যন্ত দলত্যাগের হিড়িক আটকাতে আইনের দরজায় কড়া নাড়তে চলেছে বিরোধীরা।

Advertisement

দ্বিতীয় ইনিংসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নবান্নে ফেরার পরে গত কয়েক মাসেই কংগ্রেসের তিন জন এবং বামফ্রন্টের এক জন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের বিধায়ক-পদ খারিজের জন্য দুই বিরোধী পরিষদীয় নেতৃত্বের আর্জি এখনও বিধানসভার স্পিকারের বিবেচনাধীন। তার পাশাপাশি জেলা পরিষদ থেকে পুরসভা পর্যন্ত বিরোধীদের হাতে-থাকা যাবতীয় বোর্ড দখল হয়ে যাচ্ছে ঝড়ের গতিতে! এমতাবস্থায় এক সঙ্গে দু’ধরনের মামলা দায়ের করার পরিকল্পনা নিয়েছেন বিরোধী নেতৃত্ব। প্রথম মামলাটি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টে, দলত্যাগ-বিরোধী আইনের কার্যকারিতা বাড়ানোর আর্জি জানিয়ে। আর একটি জনস্বার্থের মামলা দায়ের করানোর চেষ্টা হচ্ছে ভোটারদের কাউকে দিয়ে। যেখানে প্রশ্ন তোলা হবে, একটি দলের টিকিটে কোনও প্রার্থীকে জেতানোর পরে তিনি দল বদলালে মানুষের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে কেন তাঁর বিধায়ক-পদ খারিজ হবে না? সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে আজ, বুধবারই দিল্লি যাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান।

কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মানস ভুঁইয়া সোমবার যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে, যাকে তিনি বলছেন ‘আসল কংগ্রেস’! মান্নান মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলেছেন, সৎসাহস থাকলে মানসবাবু কেন লিখিত ভাবে স্পিকার এবং কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতাকে জানিয়ে দিচ্ছেন না যে, তিনি দল বদলেছেন? মানসবাবুর দলীয় অবস্থান জানতে চেয়ে তাঁকে চিঠিও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূলের প্রথম জমানায় অসিত মাল, গোলাম রব্বানি, উমাপদ বাউরি, সুশীল রায় বা এই দফায় তুষারকান্তি ভট্টাচার্য, রবিউল আলম চৌধুরীদের নিয়ে একই ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই দলবদলের ঘনঘটা আটকাতে তাঁদের বৃহত্তর কোনও পরিকল্পনা আছে কি? মান্নান এ দিন বলেন, ‘‘দলত্যাগ-বিরোধী আইনে কিছু পরিবর্তন চাই। আইনের ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে দলবদল হয়েই চলেছে। আইনটা সংশোধন করার দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে চাই। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি।’’ এবং সারদা-কাণ্ডের মতো এ ক্ষেত্রেও মান্নানকে আইনি শলা দিয়ে সাহায্য করছেন বিকাশ ভট্টাচার্য, শুভাশিস ভৌমিকেরা। দলত্যাগ-বিরোধী আইনের পরিধি পুরসভা ও পঞ্চায়েতে প্রসারিত করার আর্জিও থাকবে সর্বোচ্চ আদালতে।

Advertisement

আইনি লড়াইয়ে সিপিএম নেতৃত্বের সমর্থনও রয়েছে মান্নানদের সঙ্গেই। বাঁকুড়ায় বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিনই বলেছেন, “গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতেই এই নোংরা খেলায় নেমেছে তৃণমূল!’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্রের বক্তব্য, “ওরা (তৃণমূল) মুখে বলে পুরসভা দখল করছে। জনপ্রতিনিধি কেনাবেচার সংস্কৃতি এ রাজ্যে ছিল না। ক্ষমতা থাকলে ওঁদের পদত্যাগ করিয়ে ফের নির্বাচন করুক তৃণমূল!’’

দল ছাড়ার পরে মানসবাবু অবশ্য আছেন খোশ মেজাজেই। সাংবিধানিক বাধ্যতায় স্পিকারের মনোনীত পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান পদ আপাতত তাঁকে ছাড়তে হচ্ছে না। শাসক দলে নাম লেখানোর পরেই আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরা এবং ২৬শে সবং যাচ্ছেন মানসবাবু। তৃণমূল কর্মী খুনের মামলায় নাম জড়ানোর পরে কয়েক মাসে সবংয়ে যাননি তিনি। কিন্তু সোমেন মিত্র ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় স্পিকারের কাছে তৎকালীন কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা যে মানসবাবুর চিঠিতে তাঁদের বিধায়ক-পদ খারিজ হয়েছিল, নিজের বেলায় তিনি ইস্তফা দিলেন না কেন? মানসবাবুর জবাব, ‘‘দলীয় নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা-ই হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement