বিধানসভা ভোটের পর থেকে চেপে বসা হতাশায় বিরোধীদের জন্য সামান্য স্বস্তির বাতাস দিচ্ছে কলেজের ভোট!
রাজ্য জুড়ে কলেজে কলেজে এখনও দাপট তৃণমূল ছাত্র পরিষদেরই (টিএমসিপি)। যে কারণে অধিকাংশ কলেজেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে টিএমসিপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যেও যে কয়েকটা কলেজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, তার তথ্য বিরোধীদের সামান্য অক্সিজেন দিচ্ছে! দেখা যাচ্ছে, ভোটে লড়ে এখনও পর্যন্ত ৯টি কলেজে এসএফআই এবং চারটিতে এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র পুরো প্যানেল জিতে আসতে পেরেছে। পক্ষান্তরে ভোটে তাদের হারিয়ে টিএমসিপি-র গোটা প্যানেল চারটি প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ হাতে পেয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি। সদ্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে যেমন টিএমসিপি-র দাপটের মধ্যেও লড়াই করে ডিএসও জিততে পেরেছে ১৯টি আসন।
এই তথ্যকে হাতিয়ার করেই বিরোধীরা অভিযোগ করতে পারছেন, বেশির ভাগ জায়গায় মনোনয়ন জমা দিতে বাকিদের বাধা দেওয়া না হলে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের জন্য আরও অস্বস্তির ঘটনা ঘটতো! বিরোধীদের দাঁত ফোটাতে না দেওয়ার পরেও কলকাতা, কল্যাণী-সহ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই তুমুল বিবাদ বেধেছে। যা গড়িয়েছে সংঘর্ষ পর্যন্ত। সেই বিবাদ মেটাতে শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে একাধিক বার হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, তাদের মনোনয়ন জমা দিতে না দেওয়া এবং তার পরে নিজেদের মধ্যে মারপিট দেখে ছাত্র-ছাত্রীরা শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতি আরও বিরূপ হচ্ছে। যেখানে যেটুকু নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে তার প্রভাব পড়ছে।
গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্র পরিষদের আসন জয়ের তথ্য উল্লেখ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী যেমন বলছেন, ‘‘ভোট হতে দিলে তৃণমূল ফল টের পাচ্ছে!’’ একই সুরে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে ছাত্র ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘যাদবপুরের কলা বিভাগের ইউনিয়ন এবং নকশালবাড়ি কলেজে এসএফআইয়ের জয় আবার প্রমাণ করে দিয়েছে, কেন তৃণমূল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দিচ্ছে না!’’ যাদবপুরের কলা বিভাগে দু’বছর পরে ফের সাফল্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে এসএফআই। যাদবপুরে গীতশ্রী সরকারের মতো কৃতী ছাত্রীকে সামনে রেখে লড়েছিল তারা। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদনের অপেক্ষা না রেখে গীতশ্রীর মতো মুখকে এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটিতে জায়গা দিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বের দেবজ্যোতি দাস, মধুজা সেন রায়েরা। পরিশ্রম এবং নতুন পথে চলার ঝুঁকিই সাফল্য এনে দিয়েছে বলে ছাত্র নেতৃত্বের মত।
বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘সারা রাজ্যে কলেজে যত আসনে নির্বাচন, সেখানে প্রার্থী দেওয়ার মতো লোক এসএফআই বা বিরোধীদের আছে? এই তো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটে ক্যাম্পাসে এত আসনে ভোট হল। ক’টা আসন বিরোধীরা পেয়েছে? আর যাদবপুরে তো তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই ছিলই না!’’