ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থা পিনকনের বেআইনি কারবারের তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির হাতে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের শাসক দল ও প্রশাসনের বহু বড় মাথা এই সংস্থার সঙ্গে জড়িত বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের সংস্থা তদন্তের নামে তথ্য-প্রমাণ লোপাট করতে পারে।
সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থা চেয়ে আইনি লড়াই চালিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। এখন বিধানসভায় বিরোধী নেতার পদে থাকা মান্নানের বক্তব্য, ২০১৪ সালেই সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নিয়োগ করেছে। একই যুক্তিতে পিনকনের বিরুদ্ধেও কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য তাঁরা ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন বলে জানিয়েছেন মান্নান।
এক কদম এগিয়ে পিনকনের বিরুদ্ধে সিবিআই ও ইডি-র তদন্ত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সভাপতি অমিতাভ মজুমদার প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থা পিনকন আমানতকারীদের টাকা তো লুঠ করেছেই, পাশাপাশি গত নভেম্বরে নোট-বাতিলের সময়ে রাজ্যর শাসক দলের নেতা ও আমলাদের কোটি কোটি কালো টাকাও নানা কায়দায় সাদা করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ছাড়া সিবিআই, ইডি ও সেবি-র কাছেও একই অভিযোগ জানিয়েছেন অমিতাভবাবু।
পিনকন-কর্তা মনোরঞ্জন রায়-সহ ৪ কর্তা এখন রাজস্থান পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। আবার রাজ্যের আর্থিক অপরাধ দমন শাখা (ডিইও)-র হেফাজতে রয়েছেন পিনকন কর্তার স্ত্রী মৌসুমী রায় ও অন্যতম কর্তা ললিতা সারোগী। মনোরঞ্জন রায় গ্রেফতার হওয়ার পর প্রায় আট মাস আগের পূর্ব মেদিনীপুরে খেজুরি থানার একটি মামলায় মৌসুমী ও ললিতাকে গ্রেফতার করে ডিইও। এর পরে তাঁদের নিয়ে কলকাতায় পিনকনের ৩টি অফিসে তল্লাশিও করেছেন ডিইও-র অফিসারেরা। বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, পিনকন কেলেঙ্কারির সঙ্গে শাসক দলের নেতা, পুলিশ অফিসার ও আমলাদের নাম জড়িয়ে যাওয়াতেই রাজ্যের অধীন ডিইও-র অফিসারেরা তৎপর হয়ে তদন্তের নামে তথ্য প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করছেন। অমিতাভবাবুর চিঠিতেও একই অভিযোগ জানানো হয়েছে।
ভুয়ো লগ্নি-সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানো সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে রাজ্য সরকার সিট গড়েছিল। সে সময়ে শাসক দলের প্রভাবশালীদের বাঁচাতে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছিল রাজ্যের সেই তদন্ত-দলের বিরুদ্ধে। এ বারেও একই অভিযোগ উঠছে পিনকনের ক্ষেত্রেও।’’ বিকাশবাবুর যুক্তি— সেই কারণে পিনকনের বিরুদ্ধেও সিবিআই ও ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য ফের তাঁরা আদালতে যেতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে রাজস্থান পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নোট-বাতিলের সময়ে পিনকনের কলকাতার অফিসে একটি ‘গুপ্তচক্রের’ মাধ্যমে কোটি কোটি কালো টাকা নতুন নোটে বদল করা হয়েছে বলে সিবিআই ও ইডিকে তথ্য দেওয়া হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছেন পিনকন কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের ডিইও-র এক কর্তার কথায়, পিনকনের ভুয়ো অর্থলগ্নির তদন্ত করছেন তাঁরা। নোট-বাতিলের সময়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছেন না। তাই প্রমাণ লোপাটের প্রশ্ন ওঠে না।
ডিইও-র ওই কর্তার দাবি, মৌসুমী ও ললিতা গ্রেফতার হওয়ার আগেই পিনকন কর্তা মনোরঞ্জন জয়পুর স্পেশাল ব্রাঞ্চের হাতে গ্রেফতার হন। ওই সময়েই সংস্থার কলকাতার অফিসে তল্লাশি চালানো উচিত ছিল। কিন্তু রাজস্থান পুলিশ তা করেনি। তাই ‘তদন্তের স্বার্থে’ তাঁরা অফিসে তল্লাশি করেছেন। তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ ঠিক নয়।
সিবিআই ও ইডির আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, রাজস্থান পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য তাঁরা খুঁটিয়ে দেখছেন। প্রয়োজনে এ ব্যপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নামতে পারেন তাঁরা।