ক্ষমতায় এসেই সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নতুন আইন এনেছিল তৃণমূল সরকার। সেই আইনের বিরোধিতা করে মামলা করে টাটা মোটরস। সিঙ্গুরের জমি নিয়ে সরকার বনাম টাটার মামলা কলকাতা হাইকোর্ট থেকে শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে সুপ্রিম কোর্টে। বহু দিন পরে সেই সিঙ্গুর-বিতর্ক ফের উঠে এল বিধানসভায়।
মঙ্গলবার বিধানসভায় সিপিএম-কংগ্রেস দু’পক্ষেরই বক্তব্য ছিল, সিঙ্গুর থেকে টাটাদের কারখানা তুলে দেওয়ার ঘটনায় রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এই ভাবমূর্তি না ফিরলে রাজ্যে নতুন শিল্প আসবে না। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের উচিত আদালতের বাইরে সিঙ্গুর সমস্যা মিটিয়ে রাজ্যের শিল্পবন্ধু ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা।
এ দিন বিধানসভায় ছিল শিল্প দফতরের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা। সেই আলোচনার সময়ই বিরোধী দলের কয়েক জন বিধায়ক সিঙ্গুর নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন। রাজ্যের চটশিল্প, চা-শিল্প বাঁচাতে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা-ও শিল্পমন্ত্রীর কাছে জানতে চান তাঁরা। কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া বলেন, “বেশ কয়েক দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পুঁজি অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে। বিরোধী দলে থাকার সময় তৃণমূল টাটাদের সিঙ্গুর-ছাড়া করেছে। এখন রাজ্যের স্বার্থেই তাদের উচিত আদালতের বাইরে ওই সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া।” সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “শিল্পমন্ত্রীর বাজেট বই পড়ে মনে হচ্ছে, এই রাজ্যে শিল্পের কোনও সমস্যা নেই! সিঙ্গুর থেকে কারখানা বিদায়ের ছবি যত দিন থাকবে রাজ্যের ভাবমূর্তি বদলাবে না।” আরএসপি বিধায়ক সুভাষ নস্কর বলেন, “রাজ্যে চা এবং পাট শিল্প খুবই বড়। কিন্তু বাজেটে ওই দু’টি শিল্প নিয়ে একটি কথাও বলা হয়নি।”
অমিতবাবু বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রাজ্যে শিল্পে কত টাকা বিনিয়োগ আসছে তাঁর হিসাবই দাখিল করেন। এতেই ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। শিল্পমন্ত্রী বিধানসভায় জানান, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে ২৯৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। ওই প্রকল্পগুলিতে প্রায় ৭৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। ওই সব প্রকল্পে ১ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। শিল্পমন্ত্রীর দাবি, ২০১১ সালের মে মাস থেকে ২০১৪ সালের মে মাস পর্যন্ত রাজ্যে শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষের।
পরে বিরোধী দলনেতা সূযর্কান্ত মিশ্র বলেন, “কোনও কিছু নিয়ে প্রশ্ন করলে উনি কোনও উত্তর দেন না। শুধু কিছু পরিসংখ্যান আউড়ে যান।”