—ফাইল চিত্র।
স্কুল সার্ভিস কমিশনে (এসএসসি) ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের যে প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছিলেন, শুক্রবার থেকে স্কুলে যেতে পারবেন শুধু তাঁরাই। এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছে আদালত। তার ফলে চাকরি গিয়েছে ২৫,৭৩৫ জনের। ওই সংক্রান্ত রায়ের ৪১ পৃষ্ঠার প্রতিলিপি আনন্দবাজার ডট কমের হাতে এসেছে। সেখানেই প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রাপকদের জন্য পৃথক ব্যবস্থার উল্লেখ আছে।
প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের চাকরি অবশ্য থাকছে না। আদালত একমাত্র ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি বহাল রেখেছে। ‘বিশেষ ভাবে সক্ষম’ সকল প্রার্থীর চাকরিই বাতিল করা হয়েছে। তবে তাঁরা আপাতত কিছু দিন চাকরি করতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের চাকরি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা এই সময়ের বেতনও পাবেন। নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গেলে তাঁদের চাকরি ‘বাতিল’ হিসাবে গণ্য হবে। প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা চাইলে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পারবেন।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আদালত বলেছে, ‘‘মানবিক কারণে সোমা দাসের চাকরি বহাল রাখা হচ্ছে। কিন্তু অন্য প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা এই সুবিধা পাবেন না। কারণ, তা আইনের শাসনের পরিপন্থী। তবে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া এবং নিয়োগ সম্পূর্ণ না-হওয়া পর্যন্ত তাঁদের চাকরি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এই সময় পর্যন্ত তাঁরা বেতনও পাবেন। ওই প্রার্থীদের প্রতিবন্ধকতার কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় এই প্রতিবন্ধী প্রার্থীরাও যোগ দিতে পারবেন। যদি প্রয়োজন হয়, তাঁরা বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় পাবেন। অন্যান্য সুযোগসুবিধাও তাঁদের দেওয়া হবে।’’
উল্লেখ্য, এসএসসির নিয়োগে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে কলকাতা হাই কোর্ট আগেই ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিলের রায় দিয়েছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালত জানিয়েছে, হাই কোর্টের সেই রায়ই বহাল রাখা হচ্ছে। তাতে সামান্য কিছু বদল আনা হচ্ছে মাত্র। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, যথার্থ ভাবেই হাই কোর্ট নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রশ্নাতীত ভাবে যাঁরা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগী’ (টেন্টেড), তাঁদের চাকরি বাতিলের সঙ্গে বেতনও ফেরত দিতে হবে। এই ধরনের প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। মূলত প্যানেল-বহির্ভূত নিয়োগ, মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন যাঁরা, তাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া, সিবিআই যে সমস্ত সাদা খাতা উদ্ধার করেছে, তাঁরাও আদালতের চোখে ‘অযোগ্য’। বাকি প্রার্থীদের মধ্যে যোগ্য এবং অযোগ্যদের চিহ্নিত করা যায়নি। তাঁদের চাকরি বাতিল হলেও বেতন ফেরত দিতে হবে না বলে জানিয়েছে আদালত।
ভ্রম সংশোধন: এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময়ে লেখা হয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছে আদালত। কিন্তু এই তিন মাসের সময়সীমা সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আদালতের রায়ের প্রতিলিপিতে লেখা হয়েছে, চাকরিহারা যে প্রার্থীরা আগে কোনও সরকারি দফতরে বা সরকার পোষিত দফতরে চাকরি করতেন, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরকে তাঁদের চাকরি ফেরত দিতে হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।