আশ্বাস পেয়ে কাজে ফিরছেন সরবরাহ কর্মীরা। ফাইল চিত্র।
চতুর্থীতে ধর্মঘট ডেকে পঞ্চমীতেই তুলে নিলেন অনলাইন খাবার অ্যাপের ‘ডেলিভারি বয়’রা। ফলে পুজোয় বাড়িতে বসে রেস্তরাঁর খাবার পাওয়ায় বাধা রইল না। যদিও এই নিশ্চিন্তি আপাতত এই উৎসবের মরশুমটুকুই। ‘হকের টাকা’ পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারী সরবরাহ কর্মীরা জানিয়েছেন, আপাতত সংস্থার আশ্বাস পেয়ে এবং পুজোর কথা ভেবে কাজ শুরু করছেন তাঁরা। তবে তাঁদের দাবি একই থাকছে। আন্দোলনও বন্ধ হচ্ছে না।
‘বেস ফেয়ার’ অর্থাৎ ডেলিভারি পিছু ন্যূনতম প্রাপ্য বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছিলেন একটি খাবার সরবরাহ অ্যাপ এবং একটি সব্জি এবং মুদির জিনিস সরবরাহ অ্যাপের সরবরাহ কর্মীরা। দুর্গাপুজোর চতুর্থী অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় ধর্মঘট। কলকাতার পাঁচটি জোনের অন্তত পাঁচ হাজার সরবরাহ কর্মী যোগ দেন তাতে। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা এ-ও জানিয়ে দেন, পুজোর মুখে এই আন্দোলন করলে সাধারণ মানুষের মতো তাঁদেরও সমস্যা হবে। তবু নিজেদের অধিকার পেতে এই আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। ফেসবুকে সরবরাহ কর্মীদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন ‘ডেলিভারি ভয়েস’-এর পেজে কর্মসূচির কথা জানিয়ে শুরু হয় ধর্মঘট। সেই ধর্মঘট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারও করা হল ফেসবুকে খবর দিয়েই।
শুক্রবার পঞ্চমীর দুপুর আড়াইটে নাগাদ আন্দোলনকারীরা জানান, কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁদের দাবি ভেবে দেখার জন্য ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। এমনকি লক্ষ্মীপুজোর পর সরবরাহ কর্মীদের সঙ্গে আরও এক বার বৈঠক করার কথাও বলেছেন। তাঁদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েই তাঁরা আপাতত কাজ শুরু করছেন। তবে দাবি পুরোপুরি না মেটানো পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন জারি থাকবে।
আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হলে সরবরাহ কর্মীদের প্রতিনিধিরা জানান, যে পাঁচটি জোনে কর্মবিরতি চলছিল, সেখানে কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ‘‘লক্ষ্মী পুজো পর্যন্ত কাজ করুন। ২০ টাকা থেকে ৮০ টাকার একটি সার্জ দেওয়া হবে ডেলিভারি পিছু।’’
অন্য দিকে, মুদির জিনিস সরবরাহ পরিষেবার কর্মীদের আন্দোলনে যুক্ত উপেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘বেস ফেয়ার ৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল, শুক্রবার বৈঠক করে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন, ওই টাকার অঙ্ক আবার ৪০ টাকা করে দেওয়া হবে।’’ তবে চুক্তি হয়নি এখনও। আশ্বাস পেয়েই কাজে ফিরতে রাজি হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের আশা, ষষ্ঠীর সকাল থেকে আবার পরিষেবা স্বাভাবিক হবে।
প্রসঙ্গত, সরবরাহকর্মীদের অভিযোগ ছিল, দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা কাজ করে তাঁরা বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন বড়জোর ৫০০-৬০০ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সেই আয় আরও কমেছে। সেই সমস্যার কথা বলেই কর্তৃপক্ষের কাছে দু’টি দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। এক, তাঁদের ‘বেস ফেয়ার’ অর্থাৎ ডেলিভারি-পিছু ন্যূনতম প্রাপ্য (বর্তমানে ২০ টাকা) বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করতে হবে। দুই, অতিরিক্ত কিলোমিটার পিছু প্রাপ্য ৫ টাকার বদলে ১০ টাকা করতে হবে। ধর্মঘটীদের দু’তরফেই জানানো হয়েছে মুখের কথায় আশ্বাস পেয়ে কাজে ফিরছেন সকলে। তবে তাঁদের যে দু’টি দাবি নিয়ে আন্দোলন চলছিল, তা আগামী দিনেও চলবে।