এক কাগজকলে সমস্যা মিটতে না মিটতেই সিন্ডিকেট ও লোক নিয়োগের চাপের অভিযোগ তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হল দুর্গাপুরের আরও একটি নির্মীয়মাণ কাগজকল।
‘উপযুক্ত পরিবেশ নেই’ জানিয়ে শুক্রবার কাজ বন্ধের নোটিস ঝুলিয়েছিলেন দুর্গাপুরের প্রতাপপুরের কাগজকল কর্তৃপক্ষ। সোমবার তাঁদের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করে কাজ শুরু করতে বলেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। কোনও সমস্যা হলে তিনি দেখবেন বলে আশ্বাসও দেন। এই বৈঠকের পরপরই মলয়বাবুর সঙ্গে দেখা করেন দুর্গাপুরের খয়রাশোলের একটি কাগজকল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ সেই একই, সিন্ডিকেটের দাপট ও লোক নিয়োগের জন্য চাপ।
শ্রমমন্ত্রী মলয়বাবু বলেন, “খয়রাশোলের কারখানা কর্তৃপক্ষ ওঁদের কিছু অতিরিক্ত জমি দরকার বলে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।” কারখানার অন্যতম অংশীদার স্বপন রায়ের দাবি, জমির প্রয়োজন ছাড়াও সিন্ডিকেট ও নিয়োগ নিয়ে চাপের বিষয়টি তাঁরা মন্ত্রীকে জানিয়েছেন। মন্ত্রী তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। স্বপনবাবু বলেন, “পরিস্থিতি না পাল্টালে মুশকিল হয়ে যাবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে খয়রাশোলে একটি বেসরকারি ইস্পাত সামগ্রী নির্মাণের কারখানা গড়ে ওঠে। বছর দুয়েক আগে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সেখানেই কাগজকল তৈরি হচ্ছে। স্বপনবাবু জানান, চার জনের মালিকানাধীন এই কাগজকলটি তিনি দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, “এখানে রফতানি যোগ্য কাগজ তৈরি হবে। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা লগ্নি করা হয়েছে। রাজ্যে এমন কারখানা একটিও নেই। দেশে আছে হাতে গোনা কয়েকটি। ইন্দৌরে আমরা এমন দু’টি কাগজকল চালাচ্ছি।” তিনি জানান, কারখানা চালু হলে প্রায় সাড়ে চারশো মানুষ কাজ পাবেন। যার এক তৃতীয়াংশ অদক্ষ কর্মী। তাঁদের নেওয়া হবে এলাকা থেকে।
স্বপনবাবু অভিযোগ করেন, কারখানার নির্মাণকাজের জন্য স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের কাছ থেকে জিনিস কিনতে হচ্ছে। নিম্নমানের জিনিস দিলে তা-ই নিতে হয়। দামও বাজারদরের থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এখন আবার সেই সিন্ডিকেট লোক নিয়োগের জন্য চাপ দিচ্ছে বলে স্বপনবাবুর অভিযোগ। তাঁর কথায়, “উৎপাদন শুরুর পরে লোক লাগবে। কিন্তু, এখন লোক নিয়ে কী করব? এ কথা সিন্ডিকেটকে বোঝাতে পারছি না। বাধ্য হয়ে শ্রমমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছি।”
প্রতাপপুরের কাগজকল কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট চালানোর ব্যাপারে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর দিকে আঙুল তুলেছিলেন। খয়রাশোলের কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য সিন্ডিকেটের পিছনে কারা রয়েছেন, সে নিয়ে কিছু খোলসা করেননি। স্বপনবাবুর বক্তব্য, “আমি বাইরের লোক। এলাকার রাজনীতি জানি না। স্থানীয় যুবকেরা সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন।” স্থানীয় সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তৃণমূল কর্মীরাই। তাঁরা এলাকার প্রায় সব কারখানায় নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করেন। সিন্ডিকেটের এক সদস্য কৃষ্ণেন্দু শ্যাম অবশ্য জোর করে নির্মাণ সামগ্রী নিতে বাধ্য করা বা লোক নিয়োগ নিয়ে চাপ দেওয়ার অভিযোগ মানেননি। উল্টে তাঁর দাবি, “ওই কাগজকলে মাল সরবরাহ করে আমরাই বিপাকে পড়েছি। অনেক টাকা বাকি পড়ে রয়েছে।”
এ দিন শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে প্রতাপপুরের কাগজকলের ম্যানেজার অর্ধেন্দু হাজরা বলেন, “মন্ত্রী বলেছেন, আর কোনও সমস্যা হবে না। আমরা শীঘ্র কাজ শুরুর নোটিস দেব।” মন্ত্রী মলয়বাবু বলেন, “ওই কারখানাকে পুলিশ-প্রশাসন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।”