শমসেরগঞ্জের লক্ষ্মীপুজো। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
মুর্শিদাবাদের দুই প্রান্তের দু’টি জায়গা কান্দির মনোহরপুর ও শমসেরগঞ্জের কৃষ্ণনগরে শারদোৎসব বলতে স্থানীয় মানুষ লক্ষ্মীপুজোই বোঝেন। এই দুই এলাকাতেই দুর্গাপুজো বলতে গেলে প্রায় হয়ই না। বরং একাদশীর দিন থেকে শুরু হয় উৎসবের আনন্দ। তা সমারোহের আকার নেয় কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিনে।
মনোহরপুরের বাসিন্দাদের দাবি, টানা ১০২ বছর ধরে লক্ষ্মী পুজো হচ্ছে এই গ্রামে। কান্দি শহর থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে ওই গ্রাম। পুজোকে ঘিরে টানা দু’দিন ধরে মন্দির চত্বরে রকমারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রা, বাউল ও কবিগানের আসর বসে। পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামে মেলাও বসত। কিন্তু এ বার সবটাই ফাঁকা। বাসিন্দাদের দাবি, করোনা সংক্রমণ বিধি মেনে চলতে এ বার পুজোর সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। তবে পুজোর আয়োজনে খামতি নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একশো বছরেরও আগে গ্রামের বৈরাগী পরিবারের পারিবারিক পুজো ছিল কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। কিন্তু ওই পরিবারটি পরে গ্রাম ছেড়ে কান্দি শহরে চলে যায়। কিন্তু তা হলে কি গ্রামে পুজো হবে না? তার পরেই গ্রামের মোড়লরা একত্রিত হয়ে লক্ষ্মী পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন থেকে ওই পুজোই হয়ে ওঠে গ্রামের শারদোৎসব। ওই গ্রামের বাসিন্দা তপন ভট্টাচার্য বলেন, “কান্দি এমনিতেই শস্যগোলা বলে পরিচিত। আমাদের গ্রামেও প্রায় সকলেই কৃষিজীবী। আমাদের গোলা যেন সারা বছর শস্যে ভরে থাকে, দেবীর কাছে ওই প্রার্থনা করা হয়। তাই লক্ষ্মী পুজোতে গোটা গ্রামের প্রত্যেক পরিবার যোগ দেয়।” মণ্ডপে লক্ষ্মী প্রতিমার পাশে থাকে নারায়ণ। দু’পাশে জয়া ও বিজয়া।
শমসেরগঞ্জের কৃষ্ণনগর গ্রামে লক্ষ্মী পুজোয় বাড়ি ফেরেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। আত্মীয় স্বজনেরা আসেন। তবে করোনা আবহে রীতি ভেঙে মেলা ছাড়াই আয়োজিত হয়েছে প্রাচীন লক্ষ্মী পুজো। বুধবার রাত থেকে শুরু করে টানা চার দিন চলবে পুজো। পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা রাধেশ্যাম মণ্ডল, অর্জুন মণ্ডল, রাজু মণ্ডলরা জানান, এখানেও পুজো একশো বছরেরও বেশি পুরনো। এ বার মাস্ক ছাড়া পুজো মণ্ডপে প্রবেশ নিষেধ। রাখতে হবে সামাজিক দুরত্বও। বিধি মেনেই পুজোর ফল কাটা থেকে আলপনা দেওয়া পর্যন্ত সব কাজে হাত লাগিয়েছেন গ্রামের মানুষ।