সঞ্জয়ের মতো ভাই যেন কারও না হয়: পূজা

‘দোস্তি’ থেকে ‘দুশমনি’—যেন সিনেমার মতো!ন’বছর আগে বন্ধুর প্রেমকে পরিণয়ের রাস্তায় পৌঁছে দিতে প্রাণপাত করেছিল সে। বন্ধুও তার বিয়ে দিয়েছিল। সেই বন্ধুত্ব কী ভাবে শত্রুতায় বদলে গেল, তার সাক্ষী থেকেছে রেল শহর।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩১
Share:

‘দোস্তি’ থেকে ‘দুশমনি’—যেন সিনেমার মতো!

Advertisement

ন’বছর আগে বন্ধুর প্রেমকে পরিণয়ের রাস্তায় পৌঁছে দিতে প্রাণপাত করেছিল সে। বন্ধুও তার বিয়ে দিয়েছিল। সেই বন্ধুত্ব কী ভাবে শত্রুতায় বদলে গেল, তার সাক্ষী থেকেছে রেল শহর। কিন্তু সেই শত্রুতা যে পুরনো বন্ধুর উপরে একেবারে প্রাণঘাতী হামলা পর্যন্ত গড়াবে, এখনও মানতে পারছে না খড়্গপুর!

শ্রীনু নাইডু এবং সঞ্জয় কুমার। কাহিনির দু’প্রান্তে দুই চরিত্র। ২০০৯ থেকে ২০১৩— পাঁচ বছরে দুই যুবকের বন্ধুত্বের নানা কাহিনি এখনও অনেকের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। সঞ্জয়ের নাম সামনে আসায় চমকে গিয়েছে শ্রীনুর পরিবারও। গত বুধবার শ্রীনু খুনের পরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, হামলাকারীদের এক জনও নিজেদের গুলিতে জখম হয়েছে। পরে জানা যায়, সেই জখম যুবকই সঞ্জয়। তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আপাতত সে মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। এ কথা জানার পরেই শ্রীনুর স্ত্রী পূজা শনিবার বলেন, ‘‘আমি তো এখনও কল্পনা করতে পারছি না! এমন বন্ধু, এমন ভাই যেন কারও না হয়।’’ শ্রীনুর মা রাবণাম্মাদেবীর বিস্ময়, ‘‘আমার থেকে সিঁদুর নিয়ে গিয়ে এখানকার জগন্নাথ মন্দিরে সঞ্জয়ের বিয়ে দিয়েছিল শ্রীনু। সঞ্জয়কে আমি ছেলেই ভাবতাম। আর ও আমার বৌমার সিঁদুর মুছে দিল!’’

Advertisement

সালটা ২০০৯। পূজা তখন দশম শ্রেণির ছাত্রী। পছন্দ হলেও শ্রীনু নিজে প্রেম নিবেদন করতে পারেনি। কাজে লাগিয়েছিল প্রাণের বন্ধু সঞ্জয়কে। সঞ্জয় সেই সময়ে দিনের অধিকাংশ সময় শ্রীনুর বাড়িতেই কাটাত। সঞ্জয় বন্ধুর প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে গেলেও পূজা প্রথমে রাজি হননি। সঞ্জয়ও ছাড়ার পাত্র নয়। বন্ধুর জন্য সে বহুবার পূজার কাছে আর্জি জানিয়েছে। তার লেগে থাকায় শেষ পর্যন্ত চিড়ে ভিজেছে। মাস কয়েক প্রেমের পরে ওই বছরেই বিয়ে হয় শ্রীনু-পূজার। তার পর থেকে সঞ্জয়কে ‘ভাই’ বলে মেনে নিয়েছিলেন পূজা। প্রতি বছর রাখি পরাতেন। সঞ্জয়ের বিয়ের ব্যবস্থা আবার পুরোটাই নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছিল শ্রীনু। সে সব দিনের কথা এখনও মনে পড়ছে পূজার, ‘‘সঞ্জয় না থাকলে আমাদের বিয়ে হতো কিনা, কে জানে!’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়্গপুরে ‘রেল মাফিয়া’ হিসেবে শ্রীনুর উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধ জগৎ সঞ্জয়কেও চিনতে থাকে। তোলাবাজি, ডাকাতি-সহ নানা অপরাধে শ্রীনুর সঙ্গে সঞ্জয়ের নামও জড়ায়। ২০১৩ সালে ‘বখরা’ নিয়ে দু’জনের গোলমাল দাঁড়ি টেনে দেয় সেই নিখাদ বন্ধুত্বে। সঞ্জয় একবার শ্রীনুর তৈরি মন্দির ভাঙচুর করতে যায়। গেটবাজারে শ্রীনু ও সঞ্জয়ের মারপিটও হয়। পরের বছরও একটি পুজোকে কেন্দ্র করে দু’জনের ‘শত্রুতা’র নজির সামনে আসে। দুই গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়ায়।

এই ‘শত্রুতা’র পরিণতি যে হত্যা পর্যন্ত গড়াবে, পূজা বা রাবণাম্মাদেবী তা ভাবতে না পারলেও শ্রীনুর মেজদা ভোগেশ্বর নায়ডু যেন সেই ইঙ্গিত পেয়েছিলেন! এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বিরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে সঞ্জয় ফোনে বহুবার শ্রীনুকে বলেছে, ‘তেরেকো ম্যায় ছোড়েগা নেহি’। সত্যিই ও ভাইয়ের প্রাণ

নিয়ে ছাড়ল।”খড়্গপুরের ওল্ড সেটলমেন্টের সাঁই মন্দিরের পিছনে রেল কোয়ার্টার সঞ্জয়ের ঠিকানা। সেখানে এখন তালা ঝুলছে। স্থানীয়েরা জানান, কয়েক মাস ধরেই সঞ্জয় সেখানে থাকে না। থাকতেন তার পরিবারের লোকেরা। অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে তাঁরা চলে গিয়েছেন। কিন্তু শ্রীনু খুনে যে সঞ্জয়েরও নাম উঠছে, এ কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না ওই এলাকার লোকেরাও। শ্রীনুর এক শাগরেদ অবশ্য বলে, এ লাইনে কেউ কারও নয়। অনেক ‘দোস্তি’ শেষ হয়েছে ‘দুশমনি’তে। এখানে টাকা ও ‘পাওয়ার’ই শেষ কথা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement