(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে ধর্ষণ-বিরোধী আইন আনার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিকেলে নবান্নে আয়োজিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিলটি বিধানসভায় পেশ করার প্রস্তাব পাশ হয়ে গেল। কিন্তু বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাল্টা ওই দিনই বিধানসভা অভিযানের ডাক দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
মেয়ো রোডের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহে স্পিকারকে বলে বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডাকব। ১০ দিনের মধ্যে ধর্ষকের ফাঁসি চাই এই বিল এনে পাশ করে রাজ্যপালের কাছে পাঠাব।’’ এমন বক্তৃতার পর নবান্নে গিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পাশ করে উদ্যোগী হতে বলেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি জানান, আগামী সোম-মঙ্গলবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাক হতে পারে। সেই ভাবেই সরকারি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সোমবার শোকপ্রস্তাবের পর অধিবেশনের কাজ শেষ হয়ে যাবে। আর মঙ্গলবার বিধানসভার অধিবেশনে ধর্ষণ বিরোধী আইন পেশ করা হবে। সেই আলোচনায় অংশ নিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
তবে আচমকা অধিবেশন ডাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু বলেন, ‘‘উনি আরজি কর ইস্যুকে ছোট দেখার চেষ্টা করছেন। উনি এবং ওঁর পার্ষদেরা বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যে ভাবে সন্দীপ ঘোষকে দিয়ে প্লেস অফ অকারেন্সকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন। সঙ্গে বিধায়ক কাউন্সিলরকে দিয়ে মৃতদেহ দাহ করিয়ে দিয়েছেন রাতের অন্ধকারে। আসলে মুখ্যমন্ত্রী জনমতকে ঘুরিয়ে দিতে চান।’’ এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘রাজ্যপালের অনুমতি ছাড়া এই অধিবেশন ডাকতে পারেন না। কারণ আমরা স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছি। এ অবস্থায় স্পিকার বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে পারেন না। রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে পারবেন না স্পিকার। তবুও আমি বিষয়টি দেখছি। ওই দিন আমরা বিধানসভা অভিযান করব। আমরা বিধায়কেরা ভিতরে বুঝে নেব। আপনারা বাইরে বুঝে নিন।’’
প্রসঙ্গত, জুলাই অগস্ট মাসে বিধানসভার যে অধিবেশন বসেছিল, তার শেষ দিনে সৌহার্য্যপূর্ণ পরিবেশ ধরা পড়েছিল মমতা-শুভেন্দুর মধ্যে। বাংলা ভাগের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় দু’পক্ষই একমত হয়ে প্রস্তাব পাশও করেছিলেন। কিন্তু ৫ অগস্টের সৌহার্দ্যের পরিবেশ বেশি দিন স্থায়ী হল না। রাজনৈতিক মহলের মতে, মঙ্গলবার বিল পাশকে কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত হতে পারে বিধানসভার অধিবেশন। সেই অগস্ট মাসেই বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে আবারও আরজি কর ইস্যুতে সম্মুখসমর হতে পারে মমতা-শুভেন্দুর। অন্য দিকে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার কথা আমি শুনেছি। সরকারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, অধিবেশন ডাকার প্রস্তুতি শুরু করব।’’
তৃণমূল পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, দু’দিনের বিশেষ অধিবেশনে তৃণমূলের সব বিধায়কদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে মন্ত্রীদেরও ওই দিনের অধিবেশনে হাজির থাকতে বলেছেন মমতা।