প্রতিবাদ: শিলিগুড়িতে বামেদের মিছিল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
ভাঁড়ারে টান। পরপর নির্বাচনী বিপর্যয়ে কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহেও ভাঁটা। তাই ব্রিগে়ডের পথ থেকে সরে এসেছিল সিপিএম। কিন্তু তৃণমূল আর বিজেপির জোড়া ব্রিগেডের চাপে মত বদলাতে শুরু করল দলে।
সিপিএমের আশঙ্কা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর নরেন্দ্র মোদী ব্রিগে়ডে দাঁড়িয়ে লোকসভা ভোটের দামামা বাজানোর পরে তাদের অজুহাত কেউ শুনবে না! বরং, ভোটের আগেই বার্তা যেতে পারে ময়দান ছেড়ে দেওয়ার। তাই তৃণমূল এবং বিজেপির মোকাবিলায় আগামী বছরের শুরুতে ব্রিগে়ড সমাবেশ আয়োজনের ভাবনা শুরু করেছে আলিমুদ্দিন। এমন পরিকল্পনায় প্রাথমিক ভাবে সায় আছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও।
মমতা ব্রিগে়ড করবেন আগামী ১৯ জানুয়ারি। ব্রিগে়ডেই তামাম বিজেপি-বিরোধী মঞ্চের ছবি তুলে ধরতে চান তিনি। তার জন্য তৃণমূলের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যাবে পুজোর পরে। তৃণমূল নেত্রী ওই সমাবেশে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য পিনারাই বিজয়নকে আমন্ত্রণের কথা বলেছেন। তিনি ডাকতে চান বাম শরিক সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লককেও। সিপিএমের পলিটব্যুরোর এক সদস্য অবশ্য বলছেন, ‘‘বাংলায় আমাদের লড়াই বিজেপি ও তৃণমূল, দু’টো দলেরই বিরুদ্ধে। তৃণমূলের সমাবেশে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘ব্রিগে়ডে অন্য দলের মঞ্চে ভিড় বাড়ানোর চেয়ে নিজেরা সমাবেশ করা ভাল!’’
তৃণমূলের ব্রিগেডের পরেই ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে এনে ওই ময়দানেই সমাবেশ করার ঘোষণা করেছিল বিজেপি। কার্যক্ষেত্রে হয়তো ২৩শের বদলে জানুয়ারিরই শেষ সপ্তাহে অন্য কোনও দিন বিজেপির ব্রিগে়ড হবে। তার আগে ডিসেম্বরের রথযাত্রা উপলক্ষেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হাজির করে লোকসভা ভোটের হাওয়া তোলার চেষ্টা করবে গেরুয়া শিবির। এই পরিস্থিতিই সিপিএমকে আগের ভাবনা বদলাতে বাধ্য করেছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘তৃণমূল আর বিজেপি ব্রিগে়ড করলে আমাদেরও শেষ পর্যন্ত একটা করতে হবে। নইলে অন্য রকম মানে দাঁড়াতে পারে।’’ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের জন্য বঙ্গ সিপিএমের নেতারা এখন দিল্লিতে। পুজোর পরে রাজ্য কমিটির বৈঠক ডেকে এ নিয়ে আলোচনা হবে।
সিপিএম নেতৃত্বের সামনে প্রশ্ন এখন দু’টো। প্রথমত, ব্রিগে়ড করলে সেটা কি তৃণমূল-বিজেপির পরে হবে না আগে? পিঠোপিঠি তিন ব্রিগে়ড হলে কার লোক কত হল, তা নিয়ে চর্চা অবধারিত! সেই অঙ্ক মাথায় রাখতে হচ্ছে আলিমুদ্দিনকে। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় কোনও কর্মসূচিতে ইদানীং কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্য জু়ড়ে ‘অধিকার যাত্রা’ শেষে কয়েক দিন আগেই গণসংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ বিপিএমও-র শহিদ মিনার সমাবেশে লোক হয়নি। তাই প্রশ্ন থাকছে, ব্রিগে়ড ভরাতে না পারলে আবার তো বিড়ম্বনা হবে?
যদিও দলের রাজ্য নেতৃত্বেরই একাংশের পাল্টা মত, শিলিগুড়ি পুরসভার প্রতি রাজ্য সরকারের আর্থিক বঞ্চনা এবং ইসলামপুর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রবিবারই শিলিগুড়িতে সিপিএমের মিছিল-সমাবেশে ভাল ভিড় হয়েছিল। ওই নেতারা বলছেন, ১৫-২০ দফা দাবির গতানুগতিকতা ছে়ড়ে ‘ব্রিগে়ড চলো’ স্লোগান নিয়ে নভেম্বর থেকে প্রস্তুতি শুরু করলে বিড়ম্বনা হবে না!