কচিকাঁচাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালিম্পঙে সভামঞ্চে যাওয়ার পথে। বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
লেপচা উন্নয়ন পর্ষদের অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁদের কাজের প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তারপরে বুধবার ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পেরও উদ্বোধন করায় পাহাড়ে লেপচাদের একাংশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, এই অনুষ্ঠান সরকারি মঞ্চ হিসেবেও ব্যবহৃত হওয়ায় পর্ষদের স্বাতন্ত্র্য নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে।
গত বছর এই সময়েই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডাকা বন্ধ উপেক্ষা করে কালিম্পঙেই লেপচা পর্ষদের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে মায়াং লায়াং লেপচা ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (এমএলএলডিবি) নামে এই পর্ষদ গঠিত হয়েছিল ৩ বছর আগেই। গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের প্রায় পরপরই। কাগজে কলমে অবশ্য তার উপরে পাকা ছাপ পড়ে গত বছরই। তারই বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে গিয়ে এ দিন এই পর্ষদের কাজকর্মের ঢালাও প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, লেপচা বোর্ড দারুণ কাজ করছে। এক বছর আগে ১ হাজার বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়া হয়েছিল। ৯৯৯টি বাড়ি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “কী ভাবে বোর্ড চালাতে হয়, তা লেপচাদের থেকে শেখা প্রয়োজন। খালি মুখে কাজের কথা বললেই হয় না। কাজটা করে দেখানোর মানসিকতা দরকার।”
এর পরে ওই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধনও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার মধ্যে ছিল কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা, গীতাঞ্জলি প্রকল্পের চেক, খুদে পড়ুয়াদের বৃত্তি দেওয়া, পাহাড়ে নতুন বাস চালানো, নো-রিফিউজাল ট্যাক্সি চালু, বিজনবাড়ি ও গরুবাথানে ‘হোম স্টে’-র কাজ শুরু সহ অনেক কিছুই। তাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় লেপচাদের একাংশ খুশি হলেও আর একটি অংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কালিম্পঙে সভামঞ্চের দিকে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
ওই ক্ষুব্ধ অংশের মতে, রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাসের জন্য লেপচাদের বর্ষ পূর্তির মঞ্চকে ব্যবহার না-করলেই ভাল হত। সভাস্থলে দাঁড়িয়ে তাকদা ক্যান্টনমেন্ট, লাভা, লোলেগাঁওয়ের লেপচা সম্প্রদায়ের একাধিক প্রবীণ জানিয়েছেন, লেপচাদের স্বশাসিত বোর্ড দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁরা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে সরকারি প্রকল্পেরও উদ্বোধন হওয়ায় এমএলএলডিবি-র স্বাতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে লেপচা সম্প্রদায়ের একাংশ মনে করেন। তৃণমূলের পাহাড় কমিটির নেতা রাজেন মুখিয়া, বিন্নি শর্মা সহ অনেকেই অবশ্য দাবি করেছেন, লেপচা সম্প্রদায়ের সকলেই খুশি হয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, “লেপচাদের বোর্ড রাজ্য সরকারেরই অঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই সকলকে মিলেমিশে এগোনোর কথা বলে থাকেন।”
এ দিন বেলা ১টায় মুখ্যমন্ত্রী কালিম্পঙের রোনাল্ডসে পার্কে লেপচা বোর্ডের অনুষ্ঠানে যান। নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরে লেপচাদের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানানো হয়। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী লেপচা পর্ষদকে উন্নয়নের কাজের জন্য ১০ কোটি টাকার চেক তুলে দেন। পর্ষদের ভবন তৈরির জন্য পৃথক ভাবে আড়াই কোটি টাকাও দিয়েছেন তিনি। তামাঙ্গ বোর্ডকেও ৫ কোটি টাকার চেক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লেপচা ভাষায় পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ এবং পাঠক্রমে লেপচা ভাষা অন্তর্ভুক্ত হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, পাহাড়ে আরও নানা সম্প্রদায় বোর্ড গঠনের দাবি তুলেছেন। তিন দিনের পাহাড় সফরে তাঁর সঙ্গে অন্তত ৭টি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা পৃথক ভাবে দেখা করে নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি রক্ষার জন্য বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সকলেই বোর্ড চাইছেন। তা তো সম্ভব নয়। একটা উপায় খুঁজতে হবে।” অনগ্রসর সম্প্রদায় বিভাগ সহ অন্য দফতরের অফিসারদের বিষয়টি দেখতে বলেছেন বলে জানান তিনি।
লেপচাদের বোর্ডের প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী পরোক্ষে জিটিএ-র সমালোচনা করেছেন কি না, তা নিয়েও পাহাড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। জিটিএ-র সদস্য তথা মোর্চার সহ সম্পাদক জ্যোতি কুমার রাই বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জিটিএ-র নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু লেপচা বোর্ডের কাজ প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তার অনেক অর্থ হতে পারে। এর বেশি কিছু বলছি না।”